হিজাব দিবস উপলক্ষে ঢাবি ছাত্রীদের আলোচনা সভা

ঢাবিতে হিজাব দিবস পালিত
ঢাবিতে হিজাব দিবস পালিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রীদের উদ্যোগে পালিত হয়েছে বিশ্ব হিজাব দিবস। রবিবার বেলা ১২টায় বিভাগের ২০২৪ নম্বর কক্ষে এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম, অধ্যাপক ড. মো. মাসুদ আলম, সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মো. ইউসুফ প্রমুখ। আলোচনা সভায় বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। 

১ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় আজ রবিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ২০২৪ নম্বর কক্ষসহ পুরো বিভাগ সাজানো হয়। অনুষ্ঠানে ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ানা শারমীন রীতি কবিতা পাঠ ও ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী বীণা ইসলামিক সংগীত পরিবেশনা করেন। 

ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এবার বাংলাদেশে ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’ পালিত হয়েছে। ‘বেটার অ্যাওয়্যারনেস, গ্রেটার আন্ডাস্ট্যান্ডিং, পিসফুল ওয়ার্ল্ড’ প্রতিপাদ্যে এবারের হিজাব দিবসে বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করার আহ্বান জানানো হয়। বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজনকে স্বাগত জানান শিক্ষকরা। আগামীতে বিভাগের পক্ষ থেকে আরও বড় পরিসরে দিবসটি পালন করার ঘোষণা দেন তারা।

আলোচনা সভায় আগত শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করছেন আয়োজকরা

 

সারাবিশ্বে ২০১৩ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাজমা খান স্কুলে হিজাব পরে যাওয়ায় সহপাঠীদের কাছে নানাভাবে অপমানিত হন।এরই প্রতিবাদে তিনি মুসলমান নারীদের হিজাবের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বপ্রথম হিজাব দিবস পালনের পক্ষে প্রচারণা চালান। তারই ধারাবাহিকতায় পরে মুসলিম দেশগুলোতে এই দিবসটি পালনের প্রচলন শুরু হয়।

নারীর হিজাব পরিধান ইসলাম ও মুসলমানদের সংস্কৃতি। সমাজে নারী-পুরুষের আচার-আচরণে শালীনতা বজায় রাখার জন্য পর্দার বিধান চালু করা হয়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধানে উদ্বুদ্ধ করতে ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’ পালনে গুরুত্বারোপ করে ইসলামিক স্কলাররা। বাংলাদেশের মুসলিম মেয়েরা সাধারণত কয়েকভাবে পর্দা করে থাকে।  এর মধ্যে রয়েছে হিজাব,  নিকাব, দোপাট্রা, আল-আমিরা, শায়লা, চাদর, বোরকা ইত্যাদি । 

৪র্থ বর্ষের ছাত্রী মুনিরা রহমান তাসফি বলেন, সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা একটি কদর্য দিক। প্রগতিশীলতার নামে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে নারীদের প্রতি হিংস্রতা বাড়ছে। পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর পাশাপাশি  নারীরা যদি শালীন পোশাক বা হিজাব ব্যবহার করে তাহলে এ ধরণের ঘটনাগুলো অনেক কমে যাবে। 

বর্তমানে বাংলাদেশ, ইউরোপ-অ্যামেরিকা থেকে শুরু করে সারা বিশ্বেই হিজাব প্রসঙ্গটি বেশ আলোচিত। ৮০ বা ৯০’র দশকে পর্দানশীল মুসলিম নারীরা সাধারণ বোরকা পড়তেন। কিন্তু পরিবর্তিত বাংলাদেশে সব জায়গায়ই হিজাবি মেয়েদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি-বেসরকারি অফিস সবখানেই চোখে পড়ে হিজাব পরা নারী। 

হাতে বেলুন নিয়ে হিজাব প্রদর্শন করছেন শিক্ষার্থী, উন্মুক্ত নোটিশ বোর্ডে হিজাবের পক্ষে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত প্রকাশ।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীরা বোরকা ব্যবহার করে শত্রুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছেন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করে কোনো কোনো সময় ক্যাম্প পর্যন্ত খাবার পৌঁছে দিতেন। আবার গুলি, ম্যাগাজিন, গ্রেনেড, বন্দুক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মুক্তিদের কাছে বিভিন্ন পয়েন্টে পৌঁছে দিতেন। আহতদের গ্রামের ভেতর নিয়ে বাড়িঘরে লুকিয়ে গোপনে রাখতেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেন আর ক্যাম্পে ক্যাম্পে সংবাদ প্রেরণ করতেন।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক সাদিয়া মারিয়া, শামিয়া আফরিন ও সায়েদা সুলতানা রীমার মতে, হিজাবকে অনেকে নারীদের অবদমন ও বিভাজন সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে দেখে । আমরা আশা করছি এ আয়োজনে সমাজের একটা অংশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হবে।

হিজাব নারী স্বাধীনতায় কোন বাধা সৃষ্টি করে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নুর মিতু বলেন, আমরা পারিবারিক বা সামাজিক কোন চাপে হিজাব পড়ি না, বরং বিশ্বব্যাপী নারীর হিজাব পড়ার অধিকার এক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, হিজাব পড়ার কারণে তাদের কোন কাজ করতে সমস্যা হয় না। অন্যদের মত সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সব কাজে অংশগ্রহণ করছেন তারা।

ইসকামিক স্টাডিজ ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার সোমা ও জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণার সাথে কথা বলে জানা যায় হিজাব পড়ে তারা নিয়মিত সাইকেলিং করেন। এক্ষেত্রে তাদের কোন ধরণের সমস্যা হয় না।  এছাড়া সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে হিজাব পড়া মেয়েদের নিয়মিত জগিং করতেও দেখা যায়। একসময় নারীদের অবরোধ করে রাখা এবং পর্দাপ্রথার মধ্যে রাখার বিরুদ্ধে এদেশে লড়াই হয়েছে, নারী আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু এখন একুশ শতকে এসে হিজাব পড়াকে নিজেদের অধিকার মনে করছেন নারীরা।

এ প্রসঙ্গে বিভাগের শিক্ষার্থী বুশরা জান্নাত বলেন, ফ্রিডম অব চয়েস সবার আছে কিন্তু এদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যখন আমরা শুনি হিজাব পড়ার কারণে মেয়েদের ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে তখন নারী স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর বিরুদ্ধে বার্তা দিতে আগামীতে আরও বড় পরিসরে হিজাব দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

হিজাব আরবী শব্দের অর্থ আবৃত রাখা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী তার শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করে এমন অংশকে ঢেকে রাখাকে হিজাব বলে। হিজাব নারী জীবনের একটি মহান অনুষঙ্গ। হিজাব নারীকে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল করে। এর মাধ্যমে ইসলাম নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করে সমাজের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহকে করেছে মার্জিত ও পরিশীলিত।

ছাত্রীদের আয়োজনে স্টেজ সাজানোসহ বিভিন্নভাবে সহোযোগিতা করতে দেখা যায় ছাত্রদেরও। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে কেন হিজাবের প্রবণতা বাড়ছে জানতে চাইলে ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর হোসাইন বলেন, এদেশের মানুষের ধর্মের প্রতি বিশ্বাস বাড়ছে এবং হিজাবে নারীদের সুন্দর ও শালীন দেখায়। ১০ম ব্যাচের রিয়াজ উদ্দিন সোহেল বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের এ যুগে ছাত্রীদের উদ্যোগে এ ধরণের আয়োজন খুবই ভালো দিক। এজন্য তাদের আয়োজনে আমরাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। 


সর্বশেষ সংবাদ