ঘরেই লাশ পচে বের হচ্ছিল গন্ধ, জানে না স্ত্রী-ছেলেমেয়ে কেউ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২২, ১১:১৯ PM , আপডেট: ১০ জুন ২০২২, ১১:১৯ PM
লাশ পচে-গলে শরীর থেকে তেল জাতীয় তরল বিছানা থেকে গড়িয়ে আরেক রুম পর্যন্ত গিয়েছে। ভনভন করছিল মাছি। উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরও একই ফ্ল্যাটের পাশের রুমে থাকা একমাত্র ছেলে ইমতিয়াজ এলাহী কিছুই টের পাননি। শুধু তাই নয়, একই ভবনের ষষ্ঠতলার বাসিন্দা বড় মেয়ে নিশরাত সুলতানাও কোনো খোঁজ নেননি এ কয়দিন।
জানা গেছে, ৭৯ বছর বয়সী হতভাগা এক বাবা নাম আশিক এলাহী। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানা এলাকার একটি টাওয়ারের ১০তলায় নিজের ফ্ল্যাটের বিছানায় তার মৃত্যু হয়। এই বৃদ্ধের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ভবনের বাসিন্দারা উৎকট গন্ধ সহ্য করতে না পেরে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে হাতিরঝিলের মালিবাগ বাগানবাড়ি, ৫০৩/৬ নম্বর বাগান টাওয়ারের ১০তলার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে আশিক এলাহীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। আশিক এলাহীর বাড়ি ফেনীর পরশুরাম উপজেলায়। স্ত্রীসহ তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন।
লাশ উদ্ধারকারী হাতিরঝিল থানার এসআই ওমর ফারুক বলেন, আশিক এলাহী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি খাদ্য পরিদর্শক পদে চাকরিতে ঢুকে পদোন্নতি নিয়ে বিভিন্ন জেলায় চাকরি করেন। বছর আটেক আগে তিনি অবসরে যান। তারপর থেকে ওই বাসায় ছিলেন। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু কবে, কীভাবে মারা গেছেন কিছুই বলতে পারেননি তার ছেলেমেয়েরা।
তিনি বলেন, আশিক এলাহী ও তার বড় ছেলে ইমতিয়াজ এলাহী ১০তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন। ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানানো হয়েছে। তবে বাইরে থেকে নিজের খাবার নিজেই অর্ডার করে আনতেন। পাশাপাশি রুমে থেকেও তার বাবাকে একনজর দেখেননি। এমনকি তার বড় মেয়ে নিশরাত সুলতানা একই ভবনের ষষ্ঠতলায় থাকেন। তিনিও কোনো খোঁজ নেননি। আশিক এলাহীর স্ত্রী মোছা. নাজমুল লায়লা ছিলেন অন্য কোনো স্বজনের বাসায়। ধারণা করা হচ্ছে- অন্তত ৫ থেকে ৭ দিন আগে এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কী কারণে এই মৃত্যু- তা জানার জন্য ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। যদিও আশিক এলাহীর মেয়েরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন, দেওয়া হয়নি।
এই কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, যে বাবা মরে পচে ৫ থেকে ৭ দিন বিছানায় পড়েছিল, কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। সেই সন্তানেরা আবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এখন রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে- কোনো বিষক্রিয়া কিংবা ফুড পয়জনিং কিংবা অন্য কোনো কারণে মারা গেছেন কিনা। প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে মামলার ধারা পাল্টে যেতে পারে।
মেডিকেল সূত্র জানায়, ঢামেক মর্গেও কোনো স্বজন যায়নি।