দুর্নীতির দায়ে সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপালের ৮ বছরের কারাদণ্ড

বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক
বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক  © ফাইল ফটো

বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিককে দুর্নীতির দায়ে দুটি ধারায় মোট আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আজ রবিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।  

ঘুষ নেওয়া ও দুর্নীতির দুই অভিযোগে পার্থ গোপাল বণিককে ৫ বছর ও ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার জনিমানা করা হয়েছে, যা না দিলে তাকে আরও ৩ মাস জেল খাটতে হবে। 

পাশাপাশি ‘দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত’ তার ৬৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়েছে রায়ে।

তবে মুদ্রাপাচারের আরেক অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন সাবেক এই কারা কর্মকর্তা। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে তাকে সব মিলিয়ে সাজা খটতে হবে ৫ বছর। এর মধ্যে থেকে হাজতবাসকালীন সময় বাদ যাবে।  

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পার্থ গোপাল বণিক বলেছেন, তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

বরখাস্ত হওয়ার আগে পার্থ গোপাল বণিক ছিলেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স)। ২০১৯ সালে তার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের পর এই মামলা দায়ের করে দুদক।

সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ‘ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ ওই অর্থ তিনি পকেটে ভরেছেন এবং নিজের বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

এ মামলায় তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। সে সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সেখানকার তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।

ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী দল পার্থ গোপালকে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই তার ভূতেরগলির ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার কথা জানায় দুদক। 

দুদকের কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের দেয়াল কেবিনেটে গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা। একটি স্কুল ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় বাকি ৩০ লাখ টাকা।

আটকের সময় পার্থ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, বাকি ৫০ লাখ টাকা তার সারা জীবনের জমানো টাকা। ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি ব্যবহার করেন। যে ফ্ল্যাটে থাকেন তাও তার শাশুড়ির বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

পরদিন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পার্থ গোপাল বণিককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বছরের বেশি সময় তদন্তের পর ২০২০ সালের অগাস্ট মাসে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

সেখানে বলা হয়, পার্থ গোপাল বণিক সরকারি চাকরিতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন। এসব টাকা গোপন করে তার নামীয় কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের জন্য নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক হওয়ার পর পার্থ গোপাল বণিকের বেতন স্কেল হয় ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তার বাসায় পাওয়া অর্থ ওই বেতন স্কেলের সঙ্গে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’। তিনি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা তোলেননি, কখনও ওই অর্থ আয়কর বিবরণীতেও প্রদর্শন করেননি।

২০২০ সালের ৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পার্থ গোপালের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। সে সময় পার্থ জামিনে থাকলেও পরে হাই কোর্টে তা বাতিল করে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে তিনি সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ