হাদির ওপর ‘হামলাকারী’ বলে হাসপাতালেই সাংবাদিকের ওপর হামলা

হামলাকারীদের একজন (বাঁয়ে গোল চিহ্নিত) এবং ভুক্তভোগী সাংবাদিক
হামলাকারীদের একজন (বাঁয়ে গোল চিহ্নিত) এবং ভুক্তভোগী সাংবাদিক   © টিডিসি সম্পাদিত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মাথায় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। এ হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় তাকে।

এসময় সেখানে গিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলির সন্দেহভাজন হিসেবে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন এক গণমাধ্যমকর্মী। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ ঘটনাটি ঘটে।

ভুক্তভোগী এ গণমাধ্যমকর্মী হলেন, চ্যানেল ওয়ান নিউজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রিশান। এসময় তাকে উদ্ধার করতে গেলে হামলার শিকার হন স্টার নিউজের ঢাবি প্রতিনিধি ও ঢাবি সাংবাদিক সমিতির নির্বাহী সদস্য লিটন ইসলামও।

তাদের ওপর এ হামলার ঘটনা বর্ণনা করে ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী ও ঢাবি শিক্ষার্থী রিফাত শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য রিফাতের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:

আলহামদুলিল্লাহ, বোনাস লাইফ পেলাম বোধয় আজ!

আজকে দুপুরে লাঞ্চের উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে চানখারপুলের দিকে যাওয়ার পথে ঢাকা মেডিকেলের গেট ক্রস করার সময় দেখলাম ফেসবুকে লাইভে গিয়ে এক লোক চিৎকার করে বলছিল, ‘আমাদের ওসমান হাদি ভাইকে গুলি করেছে’। এই কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে ঘটনা যাচাই করতে হাসপাতালের এমার্জেন্সির ভিতরে ঢুকি।

ভিতরে গিয়ে অনেককে কান্নাকাটি ও অনেকের শরীরে রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে আমার অফিসকে ঘটনা সম্পর্কে জানানোর জন্য ফোন বের করে ভিডিও নিতে শুরু করি।

ফুটেজ নেওয়ারত অবস্থায় আচমকা কয়েকজন এসে কোনো কথা ছাড়াই আমাকে ধাক্কা দিতে দিতে ‘আমি হাদিকে গুলি করেছি’- এরকম একটা কথা ছড়িয়ে দেয় এবং তাৎক্ষণিক মব তৈরি করে সেখানে। এরপর চারদিক থেকে শুরু হয় আমাকে কিল-ঘুসি, খামচি দেওয়া। আমার পরিহিত পাঞ্জাবি টেনে ছিড়ে ফেলা হয়।

অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে দ্রুত বের হতে চাইলে হামলাকারীরা দৌঁড়ে আমাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে রাস্তায় ফেলে লাথি মারতে থাকে। আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগই দেয়না।

এমার্জেন্সির বাইরে তখন লাইভের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্টার নিউজের ঢাবি প্রতিনিধি লিটন ইসলাম ভাই। দূর থেকে আমাকে চিনতে পেরে দ্রুত বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। তখনও হামলাকারীরা আমাকে ছাড়ে না। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজেও কিল-ঘুষির শিকার হন।

মারধরের ফলে প্রায় অচেতন হয়ে পড়ি একটা সময়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ, আনসার কেউ তখনো সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রিফাতের ফেসবুক পোস্ট

২ মিনিট পর অচেতনতা কাটলে তখনও দেখি হামলাকারীদের দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে লিটন ভাই। তখনই আমি উঠে সেই স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করি।

মেইন গেইটের পথ যেহেতু হামলাকারীরা ঘিরে রেখেছিল, তাই খুঁজছিলাম ভিন্ন কোনো গেইট দিয়ে বের হতে পারি কিনা। এক আনসার সদস্যকে বলি ‘ভাই আমাকে একটু এখান থেকে বের করে দিন’। জবাবে সে বলে, ‘আপনাকে সাহায্য করে আমি নিজে বিপদে পড়বো নাকি? যেমনে পারেন বের হন।’ এরপর কোনোমতে সেখান থেকে বের হয়ে দ্রুত একটা রিকশা নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরি। পরে মেডিক্যাল থেকে ড্রেসিং করিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। চোখের নিচ, গলা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খামচির বড় বড় আচর দৃশ্যমান। এছাড়াও ঘুষির ফলে মাথা অনেকটা ফুলে গেছে। সারা শরীরে ব্যাথা আছে, জ্বর এসেছে।

আজকে মরতে নিছিলাম। কারণ, ওসমান হাদীর সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভিডিও নিচ্ছিলাম আমি।

সম্পূর্ণ ঘটনা ঘটলো পুলিশ-আনসারের সামনে, অথচ তারা ছিল নিরব দর্শকের ভূমিকায়। এই যদি হয় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থা। আগামী নির্বাচনে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করবে এই বাহিনী?

বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাই শরীফ ওসমান হাদীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। একইসাথে তার যেসব কর্মী-সমর্থক আজ মব করে আমাকে হত্যাচেষ্টা করলো, সিসিটিভি ফুটেজ বের করে তাদের প্রত্যেকের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা পুলিশ-আনসারকেও যেন এই ঘটনার জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়, সেই দাবি জানাই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence