অভিনব কায়দায় ১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ সায়মন ওভারসিজের বিরুদ্ধে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৬ PM
দেশে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্লেনের টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম থামছে না; বরং আরও নতুন কৌশলে বাড়ছে কেলেঙ্কারি। সর্বশেষ সায়মন ওভারসিজ লিমিটেড নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে জিডিএস আইডি ব্যবহার করে বিদেশে এয়ার টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অভিনব কায়দায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ পেয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহর কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করেছে মন্ত্রণালয়।
বিমান মন্ত্রণালয় ও ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায়ীদের সূত্র বলছে, সায়মন ওভারসিজ নামের ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় নিজেদের কোম্পানির নামে থাকা গ্লোবাল ডিস্টিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) আইডি ব্যবহার করে বিদেশে এজেন্টদের মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রি করে আসছিল। অবৈধভাবে এ টিকিট বিক্রির টাকা বৈধপথে দেশে আনা সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানটি ক্রস বর্ডারে এয়ার টিকিট বিক্রি করে অভিনব কায়দায় অর্থ পাচারে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সায়মন ওভারসিজ লিমিটেডের কাছে ক্রস বর্ডার (দেশের বাহিরে) এয়ার টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহর কাছে চিঠি পাঠিয়ে তিন কার্য দিবসের মধ্যে ব্যাখ্য চাওয়া হয়েছে।
আসফিয়া জান্নাত সালেহর কাছে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সায়মন ওভারসিজ ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক ক্রস বর্ডার (দেশের বাহিরে) টিকিট বিক্রয়ের একটি স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত সায়মন ওভারসিজ বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসেসিয়েশনের (আইএটিএ) ডিডিএস আইডি ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওই সব দেশের ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৮৯৪টি এয়ার টিকিট বিক্রয় করেছে। এই টিকিটের আনুমানিক মূল অন্তত ১৬ কোটি টাকা। টিকিটগুলো ব্যবহার করে যাত্রীরা ওই সব দেশ যেকে বাংলাদেশে এসেছে কিংবা তৃতীয় দেশে ভ্রমণ করেছে। যাত্রীরা ওই সব দেশে টিকিটের টাকা প্রদান করলেও তা বাংলাদেশে ফেরত আসেনি বলে অভিযোগ এসেছে।
একাধিক ট্রাভেল এজেন্সী ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গ্লোবাল ডিস্টিবিউশন সিস্টেমের (জিডিএস) মাধ্যমে ট্রাভেল এজেন্টরা এয়ার টিকিট বিক্রি করে থাকেন। এ জন্য নিজস্ব আইডি থাকে, যা বাংলাদেশ থেকেই পরিচালনা করতে হয়। মূলত ওই আইডির মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রি করে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসেসিয়েশনের (আইএটিএ) মাধ্যমে এয়ারলাইন্সগুলোকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এয়ারলাইন্সগুলো এভাবে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে নিজ দেশে অর্থ নেয়, যার হিসেব রিজার্ভে থাকে। কিন্তু সায়মন ওভারসিজ নিজেদের আইডি বিভিন্ন দেশের ট্রাভেল এজেন্সিকে দিয়েছে। ওই এজেন্সিগুলো থেকে বিদেশে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সেই বিক্রির টাকা আর দেশে আসছে না। দেশের রিজার্ভেও যুক্ত হচ্ছে না। এভাবেই প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পাচার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাভেল এজেন্টদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব ছিলেন আসফিয়া জান্নাত সালেহ। মূলত তিনি ওই পদের প্রভাবে ট্রাভেল খাতে বড় ধরনের অনিয়ম করেন। চলতি বছরের আগস্টে সংগঠনটির সভাপতি ও মহাসচিবের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটাব কমিটি বাতিল করে দেয় মন্ত্রণালয়। এর পর থেকেই আসফিয়ার বিরুদ্ধে এয়ার টিকিট কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ উঠতে থাকে।