‘নিষিদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তে ‘হিদায়াহ’ বই জব্দ

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের মূল ফটক
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের মূল ফটক  © সংগৃহীত

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা এক ভারতীয় নাগরিকের কাছ থেকে ‘দ্যা হিদায়াহ: কমেন্টারি অন দ্য ইসলামিক লস’ নামক ইসলামের ফিকহ্ শাস্ত্রের আইনবিষয়ক দুটি বই জব্দ করেছে স্থল শুল্ক (কাস্টমস) কর্তৃপক্ষ। গত ১৯ অক্টোবর বই দুটি জব্দ করে তারা একটি সামগ্রী আটকপত্র ইস্যু করে। যার সিরিয়াল নম্বর–৩৭২।

জানা গেছে, ভারতীয় ওই নাগরিকের নাম সামিরুদ্দিন মোহাম্মদ। তার বাবার নাম নবী বখস্। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা জেলার করয়া এলাকার বাসিন্দা।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, বই দুটি বাহাই ধর্মের। যা বাংলাদেশে বিশেষ করে মুসলিম দেশে আমদানী করা নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে আটকপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আমদানী নিষিদ্ধ বাহাই ধর্মের কিতাব হওয়ায় দুটি বই জব্দ করা হল।’

জব্দকৃত বই বাহাই ধর্মের দাবি করা হলেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এটি ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের অন্তর্ভূক্ত আইন সংক্রান্ত একটি বই। ইংরেজিতে এর নাম ‘দ্যা হিদায়াহ: কমেন্টারি অন দ্য ইসলামিক লস’ হলেও আরবিতে এর নাম আল হিদায়াহ।

বই জব্দের আটকপত্র

জানা গেছে, এ নামের বইটি হানাফী মাযহাবের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, নির্ভরযোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রামাণ্য ও মৌলিক ফিকহ গ্রন্থ। যার প্রণেতা ইমাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে আবূ বকর আল মারগীনানী। এটি ইসলামী আইন শাস্ত্রের একটি নির্ভরযোগ্য মৌলিক গ্রন্থ, যা হিজরী ষষ্ঠ (দ্বাদশ খ্রিস্টাব্দ) শতকে রচিত হয়। গ্রন্থকার এটিতে ইসলামী আইনের বিভিন্ন ধারা ও উপধারায়, ক্ষেত্রবিশেষে অন্যান্য ইমামের মতামত, দলিল- প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছেন।

হানাফী মাযহাবের রায় ও সিদ্ধান্তসমূহ পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করে এ সবের সমর্থনে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের এমন সব অকাট্য প্রমাণ পেশ করেছেন, যাতে হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত এবং রায়সমূহই সঠিক, অধিক গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করে চার খণ্ডে প্রকাশ করেছে। এর প্রথম খণ্ডটি ১৯৯৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং প্রকাশের সাথে সাথে এর সকল কপি নিঃশেষ হয়ে যায়। ব্যাপক পাঠকচাহিদার প্রেক্ষিতে এবার এর চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।

আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারকৃত যাত্রীর পাকস্থলীতে মিলল ৬৩৭৮ ইয়াবা

এর বাইরে, ‘দ্যা হিদায়াহ: কমেন্টারি অন দ্য ইসলামিক লস’ এই নামে স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে ইংরেজি সংস্করণ পাওয়া যায়। সেখানে বইয়ের ডেসক্রিপশনে (বর্ণনা) উল্লেখ করা হয়, ‘আল-হিদায়া হলো ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বিচারব্যবস্থা বা আইনশাস্ত্র (ফিকহ)-এর ওপর একটি ধ্রুপদি গ্রন্থ, যা হানাফি মাজহাব অনুযায়ী রচিত। এতে যাকাত, দান, পারস্পরিক লেনদেন, বিবাহ, তালাক, মোহর, উপহার, মৃত্যু, জানাজা, ইদ্দত, এতিম পরিচর্যা, দত্তক, উইল, দানপত্র, উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব, ওয়াকফ, বিক্রয়, অংশীদারিত্ব এবং হদ্দ সম্পর্কিত সব আইনি বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।’

বর্ণনায় আরও বলা হয়, ‘এতে উদ্ধৃত করা হয়েছে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ (রহঃ) প্রমুখ ইসলামী আইনবিদদের বক্তব্য। বিভিন্ন মতভেদ নবী করিম (সা.) – এর হাদীস এবং সাহাবিদের ফিকহি ব্যাখ্যার আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এটি ১৭৯১ সালে চার্লস হ্যামিলটন কর্তৃক করা অনুবাদের একটি সম্পূর্ণ সংশোধিত ও সম্পাদিত সংস্করণ, যেখানে যাকাত অধ্যায় থেকে পরবর্তী অংশগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে তহারা (পবিত্রতা), সালাত (নামাজ) ও সওম (রোজা)–সংক্রান্ত অংশ এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।’

জব্দকৃত বইটি নিষিদ্ধ কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের খতীব হাফেজ মাওঃ নাজীর মাহমুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আল হিদায়াহ নামে একটি কিতাব বাংলাদেশের ক্বওমী ও আলিয়া দুই মাদ্রাসায়ই পড়ানো হয়। এটি ইসলামী আইনের একটি বই। আমরাও পড়েছি।

তিনি আরও বলেন, তবে সাতক্ষীরা সীমান্তে কোন বই জব্দ করা হয়েছে, সেটা আমি জানিনা। তবে এমনও হতে পারে যে, নাম হিদায়াহ ঠিকই আছে, কিন্তু ভেতরের লেখা ভিন্ন। এ সম্পর্কে যেহেতু আমি কিছু দেখিনি, সেহেতু মন্তব্য করাও ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জব্দকৃত বইটি বাহাই ধর্মেরই। আর বাহাই ধর্ম মুসলিম দেশে আমদানী নিষিদ্ধ।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ