বিএনপির সাবেক মহাসচিবের বাসায় চাঁদাবাজি, তিন দিন পরও গ্রেপ্তার নেই

দেলোয়ার হোসেনের পরিবারে চাঁদা আদায়ের জন্য যাওয়া ব্যক্তিরা। সিসি ক্যামেরার ফটেজ থেকে নেওয়া
দেলোয়ার হোসেনের পরিবারে চাঁদা আদায়ের জন্য যাওয়া ব্যক্তিরা। সিসি ক্যামেরার ফটেজ থেকে নেওয়া  © টিডিসি সম্পাদিত

বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে যুবদল পরিচয়ধারী কয়েকজনের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার নয়াটোলায় এ ঘটনা ঘটে। তিন দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যুবদল নেতা-কর্মীর পরিচয়ে চাঁদাবাজরা অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখান। তাই প্রথমে এক লাখ টাকা দাবি করেন। ওই সময় ভয়ে ভুক্তভোগীরা মগবাজারের একটি বুথ থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন এবং আরও ২০ হাজার টাকার একটি চেকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করানো হয় তাদের। গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে হাতিরঝিল থানার এলাকায় নয়াটোলা গ্রিনওয়ে এলাকার ৬৫৩ নম্বর বাসার ৪/বি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার (৪ অক্টবর) হাতিরঝিল থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ তানজিন হামিদ মিতুল।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু দ্য ডেইলি ক্যম্পাসকে জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।  আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

অভিযোগের বরাত দিয়ে তানজিন হামিদ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে যুবদলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া শাওন (২৫), হাবিব (৩৫), সাজিদ (২২) ও সানি (৩৫) তাদের ফ্ল্যাটে গিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় শাওন কোমরে থাকা অস্ত্র দেখিয়ে তানজিন হামিদকে ভয়ভীতি দেখায়। তারা আমাদের পরিচয় জানার পর আরও খারাপ আচরণ করেছে। এমনকি বাচ্চাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে। বাসায় নগদ টাকা না থাকায় তারা ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলে দিতে বাধ্য করেছে।’

মামলায় বলা হয়েছে, শুক্রবার রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে মগবাজার সিটি ব্যাংকের বুথ থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে সানিকে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়। পরদিন রাত ১২টা ২০ মিনিটে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ওই বাসায় আবারও যান। ফ্ল্যাট খালি করার জন্য হুমকি দেন।

পুত্রবধূ তানজিন হামিদ মিতুল আরও বলেন, ‘তুমি চেনো আমাদের? আমরা কারা? তখন উল্টো তারা আমাদের বলে, আপনি বুঝতেছেন না? এখন সময়টা কী? আর কেন আসছি আমরা? মরহুম ডাবলু ও খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আরও খারাপ আচরণ করতে থাকে।’

তানজিন হামিদ মিতুল বলেন, ‘পরে তারা ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়। কাউকে ফোন করতেও দেয়নি। বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। বাসায় নগদ টাকা নেই বলার পর তারা বুথ থেকে টাকা তুলে দিতে বলে। ওই সময় ভয়ে আমি রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে মগবাজার সিটি ব্যাংকের বুথ থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে সানিকে দিই এবং আরও ২০ হাজার টাকার একটি চেক (চেক নং ৪১০৩১৭৩) সই করে দিই।’

তিনি বলেন, ‘পরের দিন শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে তারা আবারও আমার বড় বোনের বাসায় আসে এবং ফ্ল্যাট খালি করার জন্য হুমকি দেয়। তারা বলে, আগামী মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট খালি না করলে আমার বোন ও তার সন্তানদের হত্যা করা হবে হুমকি দেয় তারা।’

প্রসঙ্গত, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপির ষষ্ঠ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা-১ ও মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) আসন থেকে মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। সেই সঙ্গে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে তিনি সরকারদলীয় এবং সপ্তম সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। 

পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন দীর্ঘদিন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলের লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ