টঙ্গীর অন্ধকার দিক: এক বছরে ২৭ হত্যাকাণ্ড, জনজীবনে বাড়ছে ভয়
- গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১০ PM , আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৩৪ AM
গাজীপুর মহানগরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত উত্তরার আবদুল্লাহপুর পার হয়ে টঙ্গীতে প্রবেশ করলে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র অপরাধের দাপট যেন এখানেই সবচেয়ে বেশি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংলগ্ন এ এলাকা ছিনতাই, খুন, মাদক ব্যবসা এবং সশস্ত্র হামলার জন্য দুঃখ্যাত। মহানগরের অন্তত পাঁচটি এলাকা টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী উড়াল সড়ক, চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী ও জয়দেবপুর বর্তমানে পুলিশের নজরদারিতে ‘অপরাধপ্রবণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, থানা সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইকারীরা নির্ভয়ে অবস্থান করছে, এবং চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই অপরাধীদের দাপট লক্ষ্য করা যায়। টঙ্গী উড়ালসড়ক ও স্টেশন রোডে যানবাহন থামিয়ে ছিনতাই বা হত্যার মতো ঘটনা প্রায় সময় ঘটে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে অপরাধের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে মহানগরের ৮টি থানায় মোট ৪৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সদর থানায় ১১টি, টঙ্গী পূর্ব থানায় ২৪টি, টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৭টি, কোনাবাড়ীতে ৭টি, গাছায় ৫টি, পূবাইলে ৪টি, বাসনে ৫টি এবং কাশিমপুরে ৪টি হত্যা মামলা দাখিল হয়েছে। ২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছরে হত্যাকাণ্ড, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির হার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
টঙ্গীর সাম্প্রতিক আলোচিত কিছু হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীর হাতে রনজু খাঁর মৃত্যু, সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের সামনে কলেজ ছাত্র মাহফুজুর রহমানকে খুন, এবং চাঁদাবাজির কারণে কোনাবাড়ীর প্রবীণ নাসির পালোয়ানের কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত হওয়া। এ ঘটনার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরের পর আশুলিয়ায় সাংবাদিক অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা, গ্রেপ্তার ২
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “টঙ্গীতে অসংখ্য বস্তি রয়েছে, যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পালিয়ে আসা অপরাধীরা আশ্রয় নেয়। এসব বস্তি অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিণত হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছি ভয়ংকর মাদক কারবারি, ছিনতাইকারী কিংবা হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় অপরাধচক্র ধ্বংস করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি টঙ্গীসহ গোটা মহানগরে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য, প্রতিটি অপরাধ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত হচ্ছে এবং প্রয়োজনে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেন, ‘অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক বেকারত্ব বেড়েছে, যা অপরাধ প্রবণতা বাড়ানোর একটি প্রধান কারণ। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও পুরনো অপরাধচক্র পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মোটরসাইকেল তল্লাশি, সিভিল পোশাকে নজরদারি এবং রাতভর টহল জোরদার করা হয়েছে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ন, বেকারত্ব এবং পুলিশের সীমিত উপস্থিতি পরিস্থিতি অবনতির জন্য মূল কারণ। প্রশাসনকে শুধু টহল নয়, ধারাবাহিক ও কঠোর অভিযান চালাতে হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যার পর টঙ্গী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে চলাচল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাতে বাইরে বের হওয়া প্রায় বন্ধ। তারা দাবি করছেন, পুলিশ-জনগণের যৌথ উদ্যোগে দ্রুত এই অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত জরুরি।