নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩০ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৩১ PM
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বস্তাবন্দী নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে একসঙ্গে তিনটি হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল (৩১) নামের এক যুবককে। তিনি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গোয়ালবাড়িয়া এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে।
আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাতে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগরের বাঘাবাড়ি এলাকায় সড়কের পাশে একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তা থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে রবিবার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে আরও তিনটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, প্রথমে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে বস্তার পাশে পাওয়া একটি মোবাইল রিচার্জ কার্ডের সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই সূত্র ধরেই রাজধানীর কদমতলীর জুরাইন রেললাইন এলাকা থেকে মহিউদ্দিনকে আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তিনটি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
নিহতরা হলেন মহিউদ্দিনের সাবেক স্ত্রী বীথি আক্তার (২৪), তাঁদের চার বছরের সন্তান মো. রাফসান এবং একই ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা ভাড়াটিয়া নূপুর আক্তার (২৫)। পুলিশ জানায়, বীথির সঙ্গে পরিচয় থেকে গোপনে বিয়ে করেন মহিউদ্দিন। পরবর্তী সময়ে পারিবারিক কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে এবং বীথি আরেকজনকে বিয়ে করে সন্তানসহ সংসার শুরু করেন। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে পুনরায় মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ হলে বীথি সন্তানকে নিয়ে তার কাছেই চলে আসেন। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় থাকতে শুরু করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিউদ্দিন একসঙ্গে দুই স্ত্রী নিয়ে জীবনযাপন করছিলেন—জুরাইনে এক স্ত্রী এবং কেরানীগঞ্জে বীথি। বিষয়টি প্রকাশ পেলে বীথি আবার বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন, এটি নিয়ে দাম্পত্য কলহ চলছিল। শুক্রবার সকালে ঝগড়ার একপর্যায়ে মহিউদ্দিন গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে বীথিকে হত্যা করেন। হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলে তাদের শিশু সন্তান রাফসানকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। এরপর পাশের রুমে থাকা ভাড়াটে নূপুর আক্তার সব দেখে ফেলায় তাকেও খুন করেন মহিউদ্দিন।
তিনটি খুনের পর ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে বের হয়ে যান তিনি। পরে ছয়টি প্লাস্টিক ব্যাগ ও একটি ছুরি কিনে এসে তিনটি মরদেহ টুকরো করেন এবং বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন। শিশুর মরদেহের টুকরা কেরানীগঞ্জের বেয়ারা এলাকায় ফেলে দেন, বীথি ও নূপুরের মরদেহের অংশগুলো নদীতে ও রাস্তায় বস্তাবন্দী করে ফেলে দেন।
পুলিশ জানায়, মহিউদ্দিন মাদকাসক্ত ছিলেন। এখন পর্যন্ত নূপুর ও রাফসানের মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা গেলেও বীথির সব অংশ এখনো উদ্ধার হয়নি। বীথির বোন সাথী আক্তার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের তদন্তে খোলাসা হয়েছে তিনটি হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বিবরণ।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার তদন্ত চলমান এবং আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, উপপরিদর্শক ইবনে ফরহাদ, জহুরুল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম।