অবৈধ নিয়োগে ক্লাস না নিয়েও ৪ বছর ধরে নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন ৬ শিক্ষিকা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:৩৯ AM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:৩৯ AM
ঠাকুরগাঁওয়ে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬ সহকারী শিক্ষিকা প্রায় চার বছর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। এ ঘটনায় ৬ সহকারী শিক্ষিকাসহ তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ দিয়েছে দুদক। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন ঠাকুরগাঁও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সহকারী পরিচালক আজমির শরিফ মারজী।
অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ৬ শিক্ষিকা হলেন, সদর উপজেলার দেহন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক কৌশলা রানী ও ভারতী রানী রায়। কৌশলা রানী বর্তমানে ৮নং আখানগর আর্দশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ভারতী রানী রায় সদর উপজেলার কাশিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। এছাড়াও ভুয়া কাগজে নিয়োগ নিয়েছেন আখানগর ধনীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের সাবেক সহকারী শিক্ষিকা মোছা. নাহিদ পারভীন ও লতা বালা। মোছা. নাহিদ পারভীন বর্তমানে গাইবান্ধা সদরের চাপাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং লতা বালা সদর উপজেলার মাধবপুর যোতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। একইভাবে নিয়োগ নিয়েছেন সদর উপজেলার সেনিহারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষিকা লিলি রানী রায় ও সুইটি রানী রায়। লিলি রানী রায় বর্তমানে কালীতলা কান্দরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং সুইটি রানী রায় একই স্কুলে কর্মরত আছেন।
এছাড়াও অভিযুক্তরা হলেন, তৎকালীন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বর্তমানে নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ এম শাহজাহান সিদ্দিক ও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী সলিম উদ্দিন।
আদালতে দেওয়া অভিযোগ পত্রে জানা যায়, তৎকালীন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ এম শাহজাহান সিদ্দিক সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মো. সলিম উদ্দিন পরস্পর যোগসাজসে তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যেমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে মোট ৬ জন শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে তাদের জাতীয়করণ এবং অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ৬ ভুয়া শিক্ষক। নিয়োগপ্রাপ্তরা ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি চাকরিতে যোগদানের তারিখ দেখিয়ে ৩০ জুন ২০১৭ সালে জাতীয়করণ হয় তাদের চাকরি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায় এ চার বছর পর্যন্ত তাদের কোনো সই পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও উপজেলা অফিস সহকারী সলিম উদ্দিন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরস্পরের সঙ্গে যোগসাজসে অবৈধভাবে বেতন ভাতা ও উৎসব ভাতা বাবদ ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৯২০ টাকা বকেয়া বিল রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উত্তোলণ করে আত্মসাৎ করেন। যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে বলে দুদক আদালতের অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার আখানগর ধনীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম গণমাধ্যমকে বলেন, তার বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষিকা ২০১৩ সালে নিয়োগের বিষয়টি তারা কেউ জানতেন না। পরে ২০১৭ সালে তাদের চাকরি জাতীয়করণ হলে তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। এর মধ্যে ওই দুই শিক্ষিকা বিভিন্ন সময় তাদের যোগদানের তারিখ পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করে। পরে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী সরকার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তাদের যোগদানপত্র নিতে বাধ্য করান।
ঠাকুরগাঁও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সহকারী পরিচালক আজমির শরিফ মারজী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতারণা মাধ্যমে ৬ শিক্ষক সম্পূর্ণ ভুয়া নিয়োগ দিয়ে ওই বিদ্যালয়গুলোতে যোগদান করেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও একই অফিসের অফিস সহকারী। তবে এর মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী মৃত্যু হলে এ মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।