জোরপূর্বক কোটি টাকা আদায়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর, চাপে এরিয়া ম্যানেজারের মৃত্যু
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৩ PM , আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৯ PM
নরসিংদীর রায়পুরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এজেন্ট উদ্যোক্তা সততা এন্টারপ্রাইজের মালিক শহিদুল ইসলাম লিটন। এরপর থেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এজেন্ট ব্যাংকের শতাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহক।
এদিকে এ ঘটনার পর ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ সইতে না পেরে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম (৪৫) বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ তার স্ত্রী আমেনা বেগমের। শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিষপান করলে সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত আব্দুল কাইয়ুম উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ডা্চ বাংলার এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। তার অধীনে রায়পুরায় ৩০টি আউটলেট (এজেন্ট শাখা) ছিল। অন্যদিকে পলাতক এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়ি একই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মহেষপুর ইউনিয়নের আলগী বাজারের সততা এন্টারপ্রাইজ নামে এজেন্ট ব্যাংকের কার্যালয়টি রোববার থেকে তালাবদ্ধ। এ খবর পেয়ে ওই শাখার ভুক্তভোগী গ্রাহকরা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে থাকেন।
এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুমের পরিবারের সদস্যরা জানান, আলগী বাজার আউটলেট (এজেন্ট শাখা) এর উদ্যোক্তা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পর থেকেই আব্দুল কাইয়ুমের ওপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করছিলেন ব্যাংকটির রিজওনাল ম্যানেজার (আর.এম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এক পর্যায়ে রেদোয়ান গ্রাহকদের সকল টাকা পরিশোধ করতে হবে এ সংক্রান্তে কাইয়ুম এর কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়।
বারবার কর্তৃপক্ষের এমন চাপ সইতে না পেরে কাইয়ুম শনিবার সকালে নিকটস্থ মাহমুদাবাদ বাজার থেকে বিষের বোতল কিনে এনে পান করেন। বিষপানের কিছুক্ষণ পর স্বজনরা টের পেয়ে প্রথমে কাইয়ুমকে ভৈরবের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কিশোরগঞ্জের জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাইয়ুম সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় মারা যান। কাইয়ুমের মৃত্যুর জন্য ম্যানেজার রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে দায়ী করছেন নিহতের স্ত্রী- স্বজন ও এলাকাবাসী।
এ ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটির অন্যান্য কর্মকর্তারা নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায় বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।
এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, ডাচ-বাংলা ব্যাংক বিশ্বস্ত হিসেবে অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদেরকে শাখা থেকে জমা রশিদও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের না জানিয়ে কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করে রোববার শাখাটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। টাকাসহ কর্মকর্তা লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অতিদ্রুত তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এরিয়া ম্যানেজারের আত্মহত্যার বিষয় ও টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি বলে জানান রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মীর মাহাবুবুর রহমান।
এ বিষয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের রিজওনাল ম্যানেজার (আর.এম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক নরসিংদীর ভেলানগরস্থ মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসের কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার মো. অলিউল্লাহ এসব বিষয়ে হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।