নিজ কার্যালয়ে সংসদ সদস্যের অনুসারীদের মারধরের শিকার শিক্ষা কর্মকর্তা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৫ PM , আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২০ PM
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চত্বরের কার্যালয়ে ঢুকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর ভাগ্নে জহির উদ্দিনসহ ২৪ জন এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আযম।
সিদ্দিকুর রহমান নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
ভুক্তভোগী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রউফ জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি নিজ কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। এ সময় সংসদ সদস্যের ভাগ্নে জহির উদ্দিন এবং সংসদ সদস্যের অনুসারী রুবেল আলী, শাসসুদ্দিন, জামাল উদ্দিন, বাহাউদ্দিনসহ ২৪ জন যুবক তাঁর কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন।
আরও পড়ুন: খুঁজে খুঁজে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের পেটাচ্ছে ছাত্রলীগ
আবদুর রউফ বলেন, তাদের আসার কারণ জানতে চাইলে রুবেল আলী তার ডান হাত ধরে বলেন, ‘এই হাতটা নেওয়ার হুকুম আছে, এই হাত নিয়ে এমপিকে দিতে হবে।’ এর পরপরই তাঁরা আবদুর রউফকে চেয়ার থেকে তুলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আকস্মিক এই ঘটনায় তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।
একই কার্যালয়ের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান বলেন, আমি স্যারের (মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রউফ) কার্যালয়ের নিচতলায় বসি। স্যারকে তাঁর কক্ষে আটকে রেখে মারপিট করা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে দ্রুত স্যারের কার্যালয়ে গিয়ে বন্ধ দরজা খোলার চেষ্টা করি। এ সময় এক যুবক বের হয়ে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে সজোর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তখন আমি মুঠোফোনে বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানাই।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোরহান উদ্দিন, বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম, উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম, আবদুল বারেক, পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পরিদর্শক মিনার আলী ঘটনাস্থলে আসেন। তবে তাদের আসার আগেই ওই যুবকেরা সেখান থেকে চলে যান। সহকারী কমিশনার ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে উপজেলার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা জড়ো হন। উপস্থিত সবাই এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তাৎক্ষণিক বিচার দাবি করেন।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধাকে জুতা দিয়ে পেটানোর অভিযোগ ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে
ঘটনায় জড়িতদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সংসদ সদস্যের অনুসারী রুবেল আলী বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মারধরের বিষয়ে কিছুই জানি না। সংসদ সদস্যের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে থাকি। তাই প্রতিপক্ষরা শক্রতা করে অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে আমি কেন তার দায়ভার নেব? অপরাধী যে–ই হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আযম বলেন, ঘটনা তদন্তের জন্য এসআই শরীফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউএনও আবু রাসেল জানান, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এতে ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।