ট্রফি নিয়ে এসিসির সভায় ভারত-পাকিস্তানের বাকযুদ্ধ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৪ PM
গত ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে এশিয়া কাপ। তবে টুর্নামেন্ট শেষ হলেও ট্রফি বিতরণ নিয়ে এখনো চলছে নাটকীয়তা। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতলেও এখনো ট্রফি হাতে পায়নি ভারতীয় দল। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব খেলার মাঠ ছাপিয়ে এখন এসিসির সভা পর্যন্ত গড়িয়েছে। দুবাইয়ে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভা রীতিমতো তিক্ত হয়ে উঠল এশিয়া কাপের ট্রফি নিয়ে।
এই বিতর্কের সূত্রপাত ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে। এসিসির নিয়ম অনুযায়ী, ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা ছিল এসিসি সভাপতি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির। তবে ভারতের ক্রিকেট দল সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নাকভির হাত থেকে ট্রফি নেবে না। এমন অবস্থায় নাকভি সাফ জানিয়ে দেন, ‘তিনি ছাড়া কেউ ট্রফি দিতে পারবেন না, এবং ভারত যদি ট্রফি না নেয়, তাহলে সেটি তুলে দেওয়া হবে না।‘ ফলস্বরূপ, মঞ্চে ট্রফি পড়ে থাকে এক পাশে, অতিথিরা চলে যান, এবং পরে একজন সেটি নিয়ে মঞ্চের পেছনে চলে যান।
এদিন এসিসির সভায় বিসিসিআই দাবি তোলে অবিলম্বে ট্রফি হস্তান্তরের, কিন্তু এসিসি সভাপতি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি সাফ জানিয়ে দেন, ভারতকে তাদের অধিনায়ককে এসিসির কার্যালয়ে পাঠিয়ে ট্রফি নিতে হবে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও সুপার জানিয়েছে, এসিসির সভায় বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজীব শুক্লা নাকভির কাছে এশিয়া কাপের ট্রফি ফেরত চেয়েছিলেন। কিন্তু নাকভি তখন জানান, এ বিষয়টি সভার আলোচ্যসূচিতে নেই। এরপরও শুক্লা জোর দিয়ে ট্রফি দেওয়ার দাবি তুললে নাকভি অনড় থাকেন। নাকভি এ সময় বলেন, ‘ভারত যদি ট্রফি নিতে চায়, তবে তাদের অধিনায়ককে এসিসি অফিসে এসে আমার কাছ থেকে সেটা নিতে হবে।’ গতকাল এসিসির এই সভায় ট্রফি হস্তান্তর নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।
এসিসির সভা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ তাদের প্রতিবেদনে আরেকটু কড়া ভাষায় বিষয়টি তুলে ধরেছে। সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, এসিসির সভায় বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজীব শুক্লা নাকভিকে একের পর এক কঠিন প্রশ্ন করেন।
কেন শিরোপাজয়ী ভারতীয় দলকে ট্রফি দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে তিনি নাকভিকে চাপে ফেলেন। শুক্লা স্পষ্ট করে বলেন, ট্রফি এসিসির সম্পত্তি, নাকভির ব্যক্তিগত নয়। শুক্লার মতে, ট্রফি যথাযথভাবে ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে এবং এসিসিকে বিষয়টি অবিলম্বে দেখভাল করতে হবে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, এ নিয়ে নাকভি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। নাকভি দাবি করেন, ভারতীয় দল লিখিতভাবে জানায়নি যে তারা তাঁর হাত থেকে ট্রফি নিতে চায় না। বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি বারবার প্রশ্ন তুলতেই নাকভি বলেন, এসব বিষয় ভিন্ন মঞ্চে আলোচনা হবে, এই সভায় নয়।
সভায় ভারতকে শিরোপা জয়ের জন্য শুরুতে অভিনন্দনও জানাননি নাকভি। শেষ পর্যন্ত বিসিসিআই প্রতিনিধি আশীষ শেলার চাপ প্রয়োগ করলে নাকভি বাধ্য হয়ে অভিনন্দন জানান। ইন্ডিয়া টুডে জিও সুপারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ট্রফি হস্তান্তর নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।
ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া আরও কঠিন ভাষায় এসিসির সভা নিয়ে জানিয়েছে, এই সভায় সবার সামনে মহসিন নাকভিকে অপমান করা হয়েছে। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের একপর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম ট্রফি ইস্যু পরে সমাধানের পরামর্শ দেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এশিয়া কাপ ট্রফি নিয়ে সিদ্ধান্ত এখন নাকভি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে হবে। সংবাদমাধ্যমটিকে সেই সূত্র বলেছে, ‘আমরা আশা করি, শেষ পর্যন্ত নাকভির শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তিনি যা করার দরকার সেটা করবেন। নইলে আমরা আইসিসির কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করব।’
সব মিলিয়ে এশিয়া কাপ ট্রফি নিয়ে একটা নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার সূত্রপাত ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। নিয়ম অনুযায়ী ট্রফি দেওয়ার কথা টুর্নামেন্টের আয়োজক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রধান মহসিন নাকভির, যিনি আবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর হাত থেকে ট্রফি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের ক্রিকেট দল।
ফলে নাকভিও সোজা জানিয়ে দেন, সভাপতি হিসেবে তিনিই ট্রফি দেবেন, না হলে ট্রফি দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, ব্যক্তিগত পুরস্কার বিতরণের পর নাকভিসহ অতিথিরা মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। ট্রফিটি তখন পড়ে ছিল এক পাশে। পরে একজন সেটি হাতে নিয়ে ভেতরে চলে যান।
তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সাক্ষী হলো নজিরবিহীন এক ঘটনার। চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি নেয়নি!