পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে বাংলাদেশের দাপুটে জয়
- টিডিসি স্পোর্টস
- প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৭ PM , আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৫ PM
পাকিস্তানকে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে দিয়ে কাজটা আগেই সেরে রেখেছিলেন টাইগার বোলাররা। জবাবে তাওহীদ হৃদয় ও পারভেজ ইমনের রেকর্ড জুটিতে সহজ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয় তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। রবিবার (২০ জুলাই) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ দশমিক ৩ ওভারে ১১০ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। জবাবে ৭ উইকেট এবং ২৭ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে স্বাগতিকরা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত সালমান মির্জার প্রথম ওভারেই মিডঅনে ফখরকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তানজিদ হাসান। এরপর আবার সালমানের আঘাত। এবার ফেরেন লিটন। ওয়াইড স্লিপে দাঁড়ানো খুশদিল ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বলটাকে মুঠোবন্দি করেন।
তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে ম্যাচে ফেরান পারভেজ হোসেন ও তাওহিদ হৃদয়। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১০ রানের কমে প্রথম ২ উইকেট হারানোত পর তৃতীয় উইকেটে এটিই সবচেয়ে বড় জুটি টাইগারদের। আগের রেকর্ডটি ৬৯ রানের। চলতি জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে ৭ রানেই ২ উইকেট খোয়ানোর পর লিটন ও হৃদয় এই রেকর্ড গড়েছিলেন। তবে রেকর্ডের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হৃদয়। ৩৭ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।
হৃদয় ফিরলেও ঠিকই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ইমন। পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এটি তার টানা দ্বিতীয় ফিফটি। ফাহিমকে ছক্কা মেরে মাইলফলকটি ছুঁয়ে নেন শ্রীলঙ্কায় শেষ দুই ম্যাচেই শূন্য রানে ফেরা পারভেজ। এরপর জাকেরকে নিয়ে সহজ জয় নিশ্চিত করেন।
এর আগে, ফিল্ডিংয়ে নেমে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন শেখ মেহেদী। তবে মেহেদীর বলে শর্ট ফাইন লেগে ফখর জামানের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তাসকিন। অবশ্য পরের ওভারেই সেই ভুলের কিছুটা ক্ষতিপূরণ করেন এই পেসার। নিজের ওভারে সাইম আইয়ুবকে ফেরান তিনি। ডিপ ফাইন লেগে মোস্তাফিজ কোনো ভুল না করে নিখুঁত ক্যাচ ধরেন। সাইম ৪ বল খেলে করেন ৬ রান।
এরপর হারিস রউফকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন মেহেদী। তার ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে মাত্র এক বাউন্ডারি হাকিয়েই সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তানি এ ব্যাটার।
পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে সালমানের উইকেটটি প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন টাইগার বোলার। তবে প্রথম বলেই ভাগ্যের জোরে রক্ষা পান পাকিস্তান অধিনায়ক—তার তোলা শটটি কাভার ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারির বদলে দুই রান হয়ে যায়। এরপর চার বল ধরে ব্যাটে–বলে সংযোগই ঘটাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ওভারের শেষ বলে উইকেটকিপার লিটন দাসের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় তাকে। ৯ বল খেলে মাত্র ৩ রান করেন তিনি।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে উইকেট মিছিলে যোগ দেন মোস্তাফিজ। ওভারের প্রথম চার বলে মাত্র ১ রান দেওয়ার পর পঞ্চম বলেই উইকেট। স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যান অঞ্চলে রিশাদের হাতে ক্যাচ তুলে দেন হাসান নেওয়াজ। চার বল খেলে রানশূন্য থাকেন তিনি।
এরপর ক্রমেই চাপ বাড়ছিল পাকিস্তান শিবিরে।অবশ্য টানা ২৬ বলে বাউন্ডারি মারতে ব্যর্থ পাকিস্তান পঞ্চম উইকেট হারায় দলীয় ৪৬ রানে। মেহেদীর বলটা অন সাইডে ঠেলে ১ রান নিতে চেয়েছিলেন ফখর। দৌড়ে গিয়ে স্ট্রাইকিং প্রান্তে বল ছুঁড়েন মেহেদী। উইকেটকিপার লিটন যখন বেল ফেলে দেন, তখন ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি নেওয়াজ।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ওপেনার ফখর জামান। তবে এবার আক্ষেপের গল্প লিখলেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখলেন। মোস্তাফিজের করা ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে তাসকিনের থ্রো ধরে স্ট্রাইকিং প্রান্তের উইকেট ভাঙেন লিটন। এতে দুবার জীবন পাওয়া ফখর ৩৪ বলে ৪৪ রান করে ফেরেন।
সপ্তম উইকেটে তরুণ আব্বাস আফ্রিদিকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় স্কোরশিট সচল রাখেন খুশদিল শাহ। এই জুটিতেই তিন অঙ্ক স্পর্শ করে পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ। তবে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে রিশাদকে যেন ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফেরেন খুশদিল। ২৩ বলে ১৭ রান করে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজের ১৩৮তম উইকেট এটি।
শেষ ওভার ৭ উইকেটে ১১০ রান নিয়ে শুরু করেছিল পাকিস্তান। তবে তাসকিনের করা সেই ওভারে প্রথম তিন বলেই তিন উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যায় দলটি।
প্রথম বলেই ফাহিম আশরাফ ক্যাচ তুলে দেন মেহেদীর হাতে। পরের বলেই রানআউট হন অভিষিক্ত সালমান। তৃতীয় বলে লিটনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন আব্বাস আফ্রিদি। এতে পাকিস্তানকে ১১০ রানে গুটিয়ে দেয় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের এই সংস্করণে এটিই দলীয় সর্বনিম্ন। আগের সর্বনিম্ন ১২৯/৭, ২০১৬ সালে মিরপুরেই এশিয়া কাপে।