সীমান্তে বসবাসকারী পাচঁ গ্রামের মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত!

উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত
উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত  © টিডিসি ফটো

এক বছর বন্ধ থাকার পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তজুড়ে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা। এতে সীমান্ত বসবাসকারী পাচঁ গ্রামের মানুষের জীবিকা নিরাপত্তা অনিশ্চদের মধ্য রয়েছে। সম্প্রতি গত শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে প্রায় চার ঘন্টা রাখাইনের মংডু টাউনশিপের উত্তরে বলিবাজার, সায়েরবিল এবং নাফ নদীর তোতার দ্বীপে গোলাগুলি হয়। গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কে আছেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্তের বাসিন্দারা।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানায়, বেশ কয়েক দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির অবস্থানে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে সরকারি জান্তা বাহিনী। আবার আরাকান আর্মির সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়েছে মিয়ানমারের তিনটি রোহিঙ্গা সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা),আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরআরএসও) ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের বাহিনী। মূলত ওপার সীমান্তে তোতার দিয়া, হাসিমের দিয়াসহ বিলাসী দ্বীপ এবং হসের দিয়া নামক দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্য তোতার দিয়া আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। এসব জায়গা দখল এবং পূর্ন উদ্ধার নিয়ে গোলাগুলি-মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে দিন দিন। 

তবে তার আগে টানা ১১ মাস যুদ্ধের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের ৮০ শতাংশ (২৭১ বর্গ কিলোমিটার) এলাকা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর এরপর টানা এক বছর বিস্ফোরণের শব্দ পাননি সীমান্তের বাসিন্দারা। এখন নতুন করে বিস্ফোরণ ও ঘরবাড়িতে গুলি এসে পড়ায় আতঙ্কে ভুগছেন সীমান্তের অন্তত আট হাজার বাসিন্দা। ঝুঁকিতে আছেন নাফ নদীতে মাছ ধরা হাজারো জেলে।

আরও পড়ুন: স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় সুপারিশপ্রাপ্তরা এমপিও পেলেও আটকা কারিগরি শিক্ষকরা

এ বিষয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে আমার সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি-মর্টারশেল বিষ্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এতে ওপারে থেকে আসা আমাদের গ্রামে বসতবাড়িতে গুলি এসে পড়ছে। গত এক মাসে ৪-৫ বার মিয়ানমান থেকে এপারে বসতবাড়িতে গুলি এসে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্তের খুব কাছাকাছি এলাকাগুলোর মধ্য উত্তর পাড়া, কোনা পাড়া  তুলাতলী, খারাইংগা ঘোনা, বালুখালীতে বসবাসকারী অন্তত আট হাজার মানুষ ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে। কারন ওপার থেকে আসা গুলি কয়েকটি বাড়ির টিনের চালা ছিদ্র হয়ে যায়। এই এলাকায় ১২’শ জেলে রয়েছে। এদের মধ্য সীমান্তের কাছাকাছি ৪০০ থেকে ৫০০ পরিবার রয়েছে। গোলাগুলির কারনে এসব পরিবারের পরিবারের দুর্দিন যাচ্ছে। এখন কেউ মাছ ধরতে যায় না।’ 

সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী জাফর আলম বলেন, ‘গতকাল ভোরে ঘুম ভাঙে গুলির শব্দে। বৃষ্টির মতো সীমান্তের দিক থেকে ভেসে আসছিল গোলার শব্দ। মনে হচ্ছিল, আমাদের চারপাশেই যুদ্ধ চলছে। তখন অনেকে তখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। গুলির শব্দে শিশুদের চোখে ঘুম ছিল না, ছিল শুধু ভয়। মায়েরা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। আর বয়স্করা কাঁপা হাতে দরজা-জানালা খুলে অন্যত্রে পালানোর পথ খুঁজছিল। কারণ কেউ জানে না পরের শব্দটা কোথা থেকে আসবে।’

এদিকে সর্বশেষ গত শনিবার ওপার থেকে আসা গুলি এপারের পাচঁ ব্যক্তির বাড়িতে পড়েছে। এর মধ্যে বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল কুদ্দুস ও সরওয়ার আলম এবং জুনাইয়েদ এর বাড়ি আছে। তার আগে গত ২৫ অক্টোবর মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল বাগগুনায় বাড়ির আঙিনায় এসে ছেনুয়ারা বেগম নামে এক নারী পায়ে গুলিবিদ্ধসহ এক কম্পিউটার দোকানে এসে গুলি পরেছিল। 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একটি গুলি এসে তাঁর ঘরের টিনের চালে পড়েছে। তাতে পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভেঙে যায়।’ সরওয়ার আলম বলেন, গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘরের এক কোণে নিরাপদ আশ্রয় নেন। এ সময় হঠাৎ একটি গুলি এসে তাঁর ঘরের টিনের চালে আঘাত করে। চাল ফুটো হয়ে গুলিটি ঘরের ভেতরে পড়ে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমামুল হাফিজ নাদিম বলেন, ‘হোয়াইক্যং সীমান্তে গোলাগুলি ঘটনার পর আমরা সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের কোন প্রয়োজন ছাড়া সেদিকে চলাফেরা না করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই এলাকায় স্থানীয়দের নিরাপত্তা বিষয়টি নজরদারীতে রাখে সেজন্য বিজিবির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া আমাদের জনপ্রধিনিদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।’

জানতে চাইলে উখিয়াস্থল ৬৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হোয়াইক্যং সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence