মধুমতীর বুকে শতবর্ষী সুরেশের জীবনসংগ্রাম থমকে নেই

ডিঙ্গি নৌকায় সুরেশ হাজরা
ডিঙ্গি নৌকায় সুরেশ হাজরা   © টিডিসি

গোপালগঞ্জের মরা মধুমতী নদীর তীরেই শতবর্ষী সুরেশ হাজরার জীবনসংগ্রাম আজও থমকে নেই। বয়স একশর ঘর পেরোলেও ভাঙা নৌকা, ছেঁড়া লুঙ্গি আর হাতে পুরনো জাল—এই সামান্য সম্বল নিয়েই তিনি লড়ে যাচ্ছেন বাঁচার লড়াই। নদীর নিস্তব্ধ জলের মতোই ক্ষয় হয়েছে তার জীবন, তবু থামেনি তার দৈনন্দিন সংগ্রাম।

ভাঙা ডিঙ্গি নৌকাই তার ঘর। ছেঁড়া একটি লুঙ্গিই তার একমাত্র পোশাক। হাতে পুরনো মাছ ধরার জাল, আর নদী—যা তার সংসার ও বেঁচে থাকার শেষ সম্বল। প্রতিদিন ভোরে তিনি নৌকায় ভেসে নামেন নদীতে। রোদ-বৃষ্টি-শীত—কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারে না।

‘এনআইডিতে ৯৮ লেখা, আসলে আমার বয়স ১১০,’ বললেন সুরেশ হাজরা। কথা বলতে বলতে চোখ থমকে যায় নদীর দিকে। আবার বলেন, ‘শরীর আর সায় দেয় না, তবুও মাছ ধরতেই হয়, না হলে খাব কী?’

তার দিন কাটে নদীতে মাছ ধরেই। কখনো ৫০ টাকা, কখনো দেড়শ টাকা পর্যন্ত মাছ পান। সেই টাকায় কিনে নেন সামান্য খাবার। সরকারি সহযোগিতা বলতে মাসে মাত্র ৬০০ টাকার বৃদ্ধ ভাতা—যা তিন দিনের খাবারও জোটায় না।

একসময় পরিবার ছিল তারও। স্ত্রী বহু আগেই চলে গেছেন। এক ছেলে থাকলেও বহু বছর ধরে যোগাযোগ নেই। এখন তার সঙ্গী শুধু নদী আর স্মৃতি।

স্থানীয় বাসিন্দা সজিব বিশ্বাস বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই তাকে দেখছি। খুব কষ্টে দিন কাটান। এই বয়সেও তাকে নদীতে নেমে মাছ ধরতে হয়। সরকার যদি একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিত, ওটাই সবচেয়ে বড় সাহায্য হতো।’

মডেল স্কুল রোডের বাসিন্দা তুষার বিশ্বাস বলেন, ‘এমন মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। দারিদ্র্য তাকে অসহায় করেছে, কিন্তু তার আত্মসম্মান অটুট। কখনো কারো কাছে হাত পাতেন না।’


সর্বশেষ সংবাদ