নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা, সতর্ক অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৭ AM
রাজধানীর পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে।
এদিকে সকাল ৬টার আগেই ট্রাইব্যুনালের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনের সদস্য মোতায়েন রয়েছে। একইসঙ্গে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, কাকরাইল মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, আনসার ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান ও টহল দিতে দেখা গেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনসংক্রান্ত। অপর মামলাটি ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় দায়ের করা হয়। এসব মামলায় সাবেক ও বর্তমান ২৫ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জন আসামি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫ সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।
গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে. এম. আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে)। এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।
আরও পড়ুন: ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির
এ মামলায় র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালকও (ডিজি) আসামি। তারা হলেন বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি হন), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ। তাঁরা বর্তমানে পলাতক। মামলার তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম এরাও পলাতক আছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের অপর মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ মোট ১৩ জনকে। তাদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।
এ মামলায় আরও আসামি রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাচ মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক। তাদের পাশাপাশি ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হকও অভিযুক্ত। তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি, যদিও কিছু সূত্র বলছে, তারা দেশ ত্যাগ করেছেন।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রেদোয়ানুল ইসলাম ও রাফাত-বিন-আলম বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন, আর বাকি দুজন পলাতক বলে জানা গেছে।