সেন্টমার্টিনে নেই পর্যটক, থমকে গেছে টেকনাফের অর্থনীতি
- মোহাম্মদ ইউনুছ অভি, টেকনাফ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫০ AM
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ থাকায় থমকে গেছে দ্বীপের অর্থনীতি। তবে এবার সেই ধস ছড়িয়ে পড়েছে মূল ভূখণ্ড টেকনাফেও। পর্যটননির্ভর ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন টেকনাফের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্ট কর্মী, পরিবহন শ্রমিক, মাঝিসহ হাজারো মানুষ।
এক সময় টেকনাফ জেটিঘাট ছিল পর্যটকদের কোলাহলে মুখর। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ঘুরতে আসতেন সেন্টমার্টিনে, আর সেখান থেকেই জমজমাট থাকত টিকেট ব্যবসা, জাহাজঘাট কেন্দ্রিক হোটেল, খাবার দোকান, যাত্রী পরিবহনসহ নানা পেশার মানুষের আয়ের উৎস। এখন সেই ঘাটে নেমে এসেছে নীরবতা। নেই জাহাজের বাঁশির শব্দ, দোকানপাটে নেই তেমন বিকিকিনি। অনেক দোকানই বন্ধ, আর খোলা থাকলেও বেচাকেনা প্রায় নেই বললেই চলে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হোটেল-মোটেলের রুম ফাঁকা পড়ে আছে, কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর এই সময়ে যেখানে পর্যটকের ভিড় সামলাতে ব্যস্ত থাকতেন, এবার সেখানে বসে থাকতে হচ্ছে খালি চেয়ার টেবিল নিয়ে।
জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যানবাহনের চালকরাও। একজন সিএনজি চালক বলেন, ‘প্রতিদিন ৪-৫টা ট্রিপ দিতাম, এখন ১টাও হয় না। আয় নেই, পরিবার নিয়ে চলা দায় হয়ে গেছে।’
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী ওসমান গনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চলতি পর্যটন মৌসুমে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে পর্যটক যাতায়াত সীমিত থাকায় দ্বীপবাসী নানা সংকট সমস্যায় পড়েছে । আমাদের জীবন-জীবিকা চলার একমাত্র সম্ভবল হচ্ছে এই পর্যটক। তাই পর্যটক বন্ধ হলে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে অনেক কষ্ট।
সচেতন মহলের মতে, পরিবেশ সংরক্ষণ অবশ্যই জরুরি, তবে মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টিও উপেক্ষা করা যায় না। সঠিক পরিকল্পনা ও বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া পর্যটন বন্ধ রাখা মানেই হাজার হাজার পরিবারকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়া।
এদিকে, সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে আগামী নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হবে। তবে গতবারের মতো এবারও কড়াকড়ি বিধিনিষেধ থাকবে বলে জানা গেছে। দ্বীপের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন বিধিনিষেধ আরোপ করে শুধু দ্বীপবাসী নয়, টেকনাফের অর্থনীতিকেও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
তাদের দাবি, সেন্টমার্টিনে পর্যটন শুধু বিনোদন নয়, এটি হাজারো মানুষের জীবিকার একমাত্র উৎস। তাই পর্যটন চালুর সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কয়েকমাস আগে পর্যটকদের যাতায়াত সীমিত করার মতো কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। সেই অনুযায়ী প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতি রাতে গড়ে দুই হাজার করে পর্যটক থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নভেম্বর মাসে শুধু দিনের বেলায় সেন্টমার্টিনে ঘোরার অনুমতি ছিল। রাতে এই দ্বীপে অবস্থানের সুযোগ শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। এরপরের নয় মাস ভ্রমণের জন্য সেন্টমার্টিনে যাওয়া বন্ধ থাকার পর নভেম্বরের ১ তারিখে আবারও নতুন করে খুলছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন।