ভারী বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিনে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিবন্দি
- টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৩ PM
বৈরী আবহাওয়ায় টানা বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দ্বীপে স্লুইসগেট বন্ধ রাখার কারণে জমে থাকছে পানি। এতে কয়েক হাজার মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, দ্বীপের স্থানীয় এক বিএনপি নেতা স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়ায় এ সমস্য সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সাগর উত্তালের কারণে দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত থেকে টানা ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে সেন্টমার্টিনে। জোয়ার হওয়ায় বেড়েছে ঢেউ। এতে শঙ্কা বাড়ছে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায়ও শুরু হয়েছে বৃষ্টি।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে সেন্টমার্টিন ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুই দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে দ্বীপের পাচটি গ্রামের কয়েকশ ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষজন। স্থানীয় এক ব্যক্তি পানি চলাচলের একটি স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এ ছাড়া জোয়ারের আঘাতে ঘাটে নৌঙলে থাকা একটি ফিশিং ট্রলারও ডুবে গেছে।’
দ্বীপের বাসিন্দারা বলছে, গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি এখনো চলমান। ফলে দ্বীপের পূর্ব পাড়া, পশ্চিম পাড়া, মাঝের পাড়া, নজরুল পাড়া ও কোনা পাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানকার ২০০ ঘরবাড়ি এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে।
জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউপি সদস্য আল নোমান বলেন, ‘টানা বৃষ্টির পানি জমে থাকায় আমার এলাকায় অনেক ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে দ্বীপের মানুষের কষ্টের মাত্রা বেড়েছে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। মূলত স্লুইসগেট থেকে পানি বের হতে না পারায় এলাকাগুলোয় পানি জমে আছে। এতে মানুষের ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়েছে। এ স্লুইসগেট মেরামতের জন্য বারবার বলা হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তা ছাড়া এটি বন্ধ রাখায় এ ঘটনা ঘটছে।’
মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা আনোয়া বেগম বলেন, ‘আমার ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে আমরা পানিবন্দি হয়ে আছি। পরিবারের সদস্যদের অন্যত্রে পাঠিয়ে দিয়ে ঘরে অবস্থান করছি। সারা দিন পরিবারের কেউ পেটে খাবার দিতে পারিনি। রান্না করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। এভাবে চললে রাতে থাকা নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে আছি। আমার মতো এখানে অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। মূলত স্থানীয় বিএিনপি নেতা আবুল কালাম পানি চলাচলের পথ (স্লুইসগেট) বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের ঘরবাড়ি ডুবে আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে সেন্টমার্টিনের বিএনপি নেতা আবুল কালাম বলেন, ‘আমি কোনো স্লুইসগেট বন্ধ করেনি। আমার বাড়ি পাশের খলিল নামের এক ব্যক্তি সীমানা দিতে গিয়ে স্লুইসগেটটি বন্ধ করেছে। আমরা সবাই মিলে সেটি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
দ্বীপের বসবাসকারী জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘দ্বীপে কয়েকশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এখনো পানি এখনো নামেনি। মূলত স্লুইসগেটের অভাবের কারণে পানি নামছে না। এটি এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত এটি সমাধানের পথ বের করা।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেশকিছু ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। মূলত স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় এ ধরনের সমস্যা হয়েছে। ইতিমধ্য পানি চলাচলের জন্য স্লুইসগেট খুলে দিতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি থামলে আশা করি পানিও নেমে যাবে। এরপরও আমরা পানিবন্দি মানুষদের খোঁজ খবর রাখছি। পাশাপাশি সাগর উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচলও।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়ার ৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এতে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।