কাঠের কুটির শিল্পে ভাগ্য বদল, মাসে আয় কোটি টাকা

কাঠের কুটির শিল্পে ভাগ্য বদল
কাঠের কুটির শিল্পে ভাগ্য বদল  © টিডিসি ফটো

যশোরের কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল, কন্দর্পপুর, বড়েঙ্গা ও মঙ্গলকোট—এই চারটি গ্রাম এখন কাঠের কুটির শিল্পের জন্য পরিচিত। একসময় দিনমজুর বা অন্যের জমিতে কামলা খেটে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষরা আজ এই শিল্পের মাধ্যমে হয়েছেন স্বাবলম্বী।

প্রায় দুই যুগ আগে আলতাপোল গ্রামের ইনসার আলী ভারত থেকে কাঠের সামগ্রী তৈরির কাজ শিখে এসে এ শিল্পের সূচনা করেন। তার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকাবাসীও যুক্ত হন এই পেশায়। বর্তমানে চারটি গ্রামে প্রায় ৩০০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কাজ করছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা মোমদানি, ফুলদানি, চুড়ির আলনা, খুনতি, কলস, বাটি সহ নানা ধরনের ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।

ব্যবসায়ী নেতাদের হিসাব অনুযায়ী, এই শিল্প থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। তাদের দাবি, যদি রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়, তবে বছরে ৩০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।

আরও পড়ুন: ভোট গণনা চলছে প্রথাগত পদ্ধতিতে, সাড়ে ১৫ ঘণ্টায় শেষ হলো ১১ হল

শ্রমিক ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতিটি পণ্য তৈরি করে তিনি ৮ থেকে ১৫ টাকা পান। এতে দৈনিক গড়ে হাজার টাকা আয় হয়। তবে বিদ্যুৎ না থাকলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আলতাফ মোড়ল নামের আরেক শ্রমিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় যুক্ত আছেন তিনি। আয় দিয়ে সংসার চলে ঠিকই, তবে নতুন শ্রমিক আর এই খাতে আসছে না।

ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে কারখানা স্থাপনও হচ্ছে না। শ্রমিকদের অগ্রিম এককালীন মজুরি দিতে হয়, যা অনেক মালিকের পক্ষে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, শিল্পটির মানোন্নয়ন ও টিকে থাকার জন্য প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কারিগররা যেমন আরও দক্ষ হবেন, তেমনি উৎপাদিত পণ্যের মানও উন্নত হবে।

বর্তমানে এই অঞ্চলের কাঠের কুটির শিল্প শুধু স্থানীয় চাহিদাই মেটাচ্ছে না, বরং জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি সহযোগিতা ও সঠিক বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা গেলে এ শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারেও সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।


সর্বশেষ সংবাদ