মওলানা ভাসানী সেতুতে আবারও দুর্ঘটনা, নিরাপত্তাহীনতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

মওলানা ভাসানী সেতুতে সড়ক দূর্ঘটনা
মওলানা ভাসানী সেতুতে সড়ক দূর্ঘটনা  © টিডিসি ফটো

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত মওলানা ভাসানী সেতুতে আবারও দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৪ আগস্ট) রাত সাড়ে দশটার দিকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন দুই তরুণ হাদিয়া জামান ও মোকছেদুল ইসলাম। এছাড়াও উদ্বোধনের পর থেকে সেতুতে চুরির ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে। এটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।

আহত দুই তরুণের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৪ চন্ডীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সীচা গ্রামে। দুর্ঘটনায় হাদিয়া জামানের ঠোঁট, থুতনি ও মুখের এক পাশ ছিঁড়ে গেছে। হাত-পায়েও আঘাত রয়েছে। অপরজন মোকছেদুল ইসলামের চোখের ভ্রু ও পাতা ছিঁড়ে গুরুতর জখম হয়েছেন। বর্তমানে তারা গাইবান্ধা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাদিয়ার চাচাতো ভাই আকবার আলী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতুটি প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ হলেও সেখানে নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ, নেই সিসি ক্যামেরা বা স্পিড ব্রেকার। ফলে গাড়িগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে, যা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি রাতে সেতু অন্ধকারে ডুবে থাকে, কারণ এর আগেই বৈদ্যুতিক তার ও রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়েছে।

সেতুর এমন নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় নয়শত পঁচিশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি মেগা প্রকল্পে কীভাবে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি? সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন, ‘প্রতিদিন কত প্রাণ ঝরবে, কত পরিবার কাঁদবে?’ কেউ কেউ এও বলেছেন, ‘এটি শুধুই সরকারি অর্থের অপচয় আর দায়িত্বহীনতার প্রতিচ্ছবি।’

স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেতুটিকে দ্রুত পূর্ণ নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে। চুরির ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। পাশাপাশি সেতুতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও রাতে নিয়মিত পুলিশ প্যাট্রোল চালুরও জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা দ্রুত নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সেতু ও আশপাশে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সার্বক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীর টহল নিশ্চিতকরণ, বেপরোয়া যান নিয়ন্ত্রণে স্পিড ব্রেকার ও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসানো এবং চুরি-ছিনতাই রোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ।

উল্লেখ্য, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারীকে সংযুক্ত করা এই মাওলানা ভাসানী সেতুটি উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। তবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও চুরির ঘটনায় এই সম্ভাবনা এখন হুমকির মুখে।


সর্বশেষ সংবাদ