বিনোদন পার্কে ঝোপঝাড়ের আড়ালে চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড
- আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৪ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০১:৫৭ PM
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে নির্মিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী স্মৃতি পার্ক’ বিনোদনের জন্য হলেও, বর্তমানে এটি পরিণত হয়েছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কেন্দ্রে। কাফকো ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের অর্থায়নে পরিত্যক্ত খাস জায়গায় গড়ে উঠা এ পার্কটি উদ্বোধনের তিন বছর পার হলেও তেমন কোনো কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিনই অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রকট হচ্ছে।
পার্কের মধ্যে রয়েছে মুক্তমঞ্চ, কাফেটেরিয়া, শিশু কর্নার ও হাঁটা চলার রাস্তা। শুরুতে বলা হয়েছিল এখানে একটি আধুনিক লাইব্রেরিও থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। এমনকি নিরাপত্তার জন্য স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুর ও বিকেলে ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকলেও চারপাশের দেয়াল ও কাঁটাতার টপকে কিছু উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ভিতরে প্রবেশ করছে। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করছে এবং অভিযোগ রয়েছে— অনেকে ধূমপান, মাদক সেবনসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।
পার্কটির ভিতরে থাকা একমাত্র খাবারের দোকান পরিচালনাকারী মোহাম্মদ আনসার বলেন, ‘স্কুলকলেজ চলাকালীন দিনে পার্ক বন্ধ থাকে। তবে ছুটির দিনে ও বিকেলে খোলা হয়, তখন দোকান চালাই। আমি তো সবসময় এখানে থাকি না, কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য সিসিটিভি আছে।’
উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রশাসনের হলেও জনবল সংকট ও নজরদারির অভাবে সমস্যা হচ্ছে। তবে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “পার্কটি সংস্কারের বিষয়ে ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই পার্কে আনসার সদস্য নিয়োগ দিয়ে নজরদারি জোরদার করা হবে।”
এদিকে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে আসা কিছু ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, দিনের আলোতেই পার্কের ঝোপঝাড়ের মধ্যে তরুণ-তরুণীরা বসে রয়েছে। অনেকের আচরণে বোঝা যায় তারা কোনও পারিবারিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং গোপন ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্যই সেখানে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুর আলম বলেন, ‘প্রতিদিন ছেলেমেয়েরা অবাধে প্রবেশ করে মেলামেশা করছে। যেটি খুবই জঘন্য একটি বিষয়। তাছাড়া পার্কের এমন অবস্থা হয়েছে, সেখানে সময় কাটানো তো দূরের কথা; হাঁটাও যায়না।’
স্থানীয় যুবক রোকন উদ্দীন নায়েব বলেন, ‘এই পার্ককে যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতো, নিয়মিত খোলা থাকতো এবং নজরদারি থাকতো, তাহলে এমনটা হতো না। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক।’
সচেতন মহল বলছেন, একটি পার্ক কেবল বিনোদনের স্থান নয়, এটি সামাজিক ও পারিবারিক চেতনা গঠনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকলে এমন পার্ক ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সামাজিক সমস্যার উৎস হয়ে উঠতে পারে।