নিখোঁজের পরদিন অবৈধ বালুর পয়েন্ট থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার
- রংপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৪ PM , আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০১:৫৫ AM
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় একটি অবৈধ বালুর পয়েন্টের খননকৃত স্থান থেকে মারুফ মিয়া (৬) এবং আব্দুর রহমান (৭) নামের দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস। মৃত মারুফ মিয়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙি পাইকান এলাকার জাকিরুল ইসলামের ছেলে এবং আব্দুর রহমান একই এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে শিশু দুটির বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দুরে একটি অবৈধ বালুর পয়েন্টের খননকৃত স্থান থেকে শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের দাবি শিশু দুটিকে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, মারুফ মিয়া ও আব্দুর রহমান তারা দুজনেই নগরবন্দ বড়াইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সকালে তারা দুই বন্ধু মিলে খেলতে বের হয়। এরপর আর তারা বাড়িতে ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বুধবার দুপুর দুইটার দিকে আজহারুলের বালুর পয়েন্টটিতে গিয়ে নেমে খোঁজ করতে নামলে এসময় মারুফ মিয়ার মরদেহ পাওয়া যায়। তার গলায় বাঁধানো একটি রশ্মি এবং একটি বোতল পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় লোকজন গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এর সহযোগিতায় আব্দুর রহমান নামে আরো এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী আখতারুজ্জামান মুকুল বলেন, আজ সকালে (মঙ্গলবার) ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আশপাশের পুকুরগুলোতে খোঁজাখুঁজি করে। আমি বেলার দেড়টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্দেহ হয় বালুর পয়েন্টটিতে শিশুগুলো পড়তে পারে সেই থেকে আমি বালুর পয়েন্টে নামতে গেলে বালুর পয়েন্টের মালিক আজহারুল এর ভাগিনা মনু মিয়া আমাকে বাধা দেয়। এসময় আমাকে অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে আমি জোর করে গর্তে নামতেই একটি শিশুর হাত আমার হাতে লাগে। পরে আমি শিশুটি মরদেহটি উপরে তুলে দেখি শিশু মারুফের মরদেহ এটি। শিশুটির বুকের সবকটি হাড়ভাঙা ছিল। তার গলায় দড়ি ও বোতল পাওয়া যায়। পরে পাশে থাকা ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আব্দুর রহমান নামে আর এক শিশুর লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করে। তবে আমাদের ধারণা শিশু দুটিকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দাবি সঠিক তদন্ত করে এ সত্যতা উদ্ঘাটন করা হোক।
শিশু মারুফের মা রাশেদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, হামার ছওয়াক ওমরা মারি ফেলাইছে। হামরা তো কারো ক্ষতি করি নাই। হামার ছওয়াক কেনে মারিল। হামরা বিচার চাই। আর কিছু চাই না।
গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিসের সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা বেলা পৌনে ১১ টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বার থেকে একটি ফোন পাই যে আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙি পাইকার নাম এলাকায় ঘাঘট নদীতে দুটি শিশু পড়ে গেছে, এই খবর শুনে আমি রংপুর কন্ট্রোলরুমে অবহিত করি। আমি এসে এখানে দেখার পর ডুবুরি টিমকে অবহিত করি। আমাদের রংপুর থেকে ডুবুরি টিম আসে। এরমধ্যে আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পাশেই বালু তোলা গর্তে মুকুল নামে এক লোক নেমে একটা বাচ্চা উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আমাদের ডুবুরি দল সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম করে আরেকটি শিশু উদ্ধার করি।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, পাইকান ডাঙিপাড়া থেকে দুইটি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সন্দেহ থাকায় লাশ ময়নাতদন্তর জন্য মর্গে পাঠানো হবে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।