সাপে কাটা শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই অ্যান্টিভেনম — জনমনে তীব্র ক্ষোভ

সাপে কাটা শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি,
সাপে কাটা শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি,  © টিডিসি

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা ভয়াবহ এক স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। টানা বর্ষা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বিষাক্ত সাপ এখন আর শুধু জলাবদ্ধ স্থানেই সীমাবদ্ধ নেই—শুকনা ঘর, রান্নাঘর, স্কুল এমনকি মানুষের বসতঘরেও অনায়াসে ঢুকে পড়ছে। এতে সাপে দংশনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।

গত তিন সপ্তাহেই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত ৮ জন সাপে দংশিত রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগজনক তথ্য হলো, এ হাসপাতালে স্ন্যাক অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন (সাপের বিষের প্রতিষেধক) একটিও মজুত নেই। ফলে প্রতিটি রোগীকেই যশোর বা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।

আজ রোববার (৩ আগস্ট) এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ছোট শিশুকে সাপে দংশনের পর তার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে কোলে করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কিন্তু ইনজেকশন না থাকায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অসহায় সেই মা হাসপাতালের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে বুক চাপড়ে কাঁদছেন, আর আর্তনাদ করছেন, “আমার বাচ্চাটারে বাঁচান!”

এই মর্মান্তিক দৃশ্য জনমনে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অনেকে। স্থানীয়দের বক্তব্য, “সাপ এখন আর শুধু জঙ্গল বা পানিতে নেই, শোবার ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর—সব জায়গায় ঢুকছে। কিন্তু আমাদের হাসপাতালে তার প্রতিষেধক নেই, এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়?”

উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতি মাসে গড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি বহির্বিভাগের (ওপিডি) রোগীকে সেবা দিয়ে থাকে। অথচ সেখানে নেই অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন, নেই সাপে দংশনের আলাদা চিকিৎসা ইউনিট কিংবা প্রশিক্ষিত জনবল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাপে কাটা রোগীর ক্ষেত্রে প্রথম ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যেই প্রতিষেধক প্রয়োগ না হলে মৃত্যু ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

এ অবস্থায় এলাকাবাসীর জোর দাবি, অবিলম্বে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ন্যাক অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ করতে হবে এবং সাপে কাটা রোগীদের জন্য জরুরি ইউনিট চালু করতে হবে। কারণ একটি শিশুর মৃত্যু শুধু তার পরিবারের নয়, গোটা জাতির ভবিষ্যতের অপমৃত্যু।


সর্বশেষ সংবাদ