চাঁদপুর কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য, ভোগান্তিতে রোগীরা
- চাঁদপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১১:০২ AM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:০৬ AM
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু চিকিৎসকই এই দালালচক্রের সাথে সরাসরি যুক্ত।
ভুক্তভোগী বিলকিস বেগম ও মোহসিন নামের দুই রোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, হাসপাতালে সামান্য পেট ব্যথার মতো রোগের জন্যও ডা. ফাহিম ও আরএমও (রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার) ডা. জাহিদ অত্যধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন, যার বিল দাঁড়ায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি।
রোগীরা অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে সরবরাহকৃত ওষুধ না দিয়ে তাদের নির্দিষ্ট বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে আনতে বলা হয়। এসব ফার্মেসির সাথে চিকিৎসকদের কমিশনভিত্তিক চুক্তি রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথেও রয়েছে একই ধরনের লেনদেনের সম্পর্ক। এসব কেন্দ্রে রোগী পাঠিয়ে আর্থিক সুবিধা নেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল প্রাঙ্গণে দালালদের সরব উপস্থিতিও চোখে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, আরএমও ডা. জাহিদ ও ডা. ফাহিম এসব দালালদের সুবিধাজনক অবস্থান করে দিয়েছেন হাসপাতালের ভেতরেই। এর মাধ্যমে তারাও লাভবান হচ্ছেন।
মোহসিন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি আমার মাকে নিয়ে এসেছিলাম ছোটখাটো একটি অপারেশনের জন্য। কিন্তু ডা. জাহিদ আমার কাছে ২ হাজার টাকা দাবি করেন। তাহলে গরিব মানুষরা কোথায় যাবে? সরকার যদি হাসপাতাল দিয়েও সেবা না দেয়, তাহলে এদের আশ্রয় কোথায়?
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে এসে দেখি চারদিকে শুধু দালাল আর দালাল। মনে হয় দালালেরাই হাসপাতালের চালিকা শক্তি। কর্তৃপক্ষ যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভর্তিকৃত রোগী অভিযোগ করেন, এখানে আমাদেরকে একটি স্যালাইনও বিনামূল্যে দেওয়া হয়নি। সবকিছুই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এমনকি কিছু বেডে বিছানার চাদর পর্যন্ত সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয় না।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস- এর অনুসন্ধানে গত এক সপ্তাহে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। এসব বিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার (১১ জুন) সরেজমিনে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আরএমও ডা. জাহিদ ও ডা. ফাহিমের সঙ্গে কথা হয়।
এ সময় ডা. জাহিদ সরাসরি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অপরদিকে ডা. ফাহিম বলেন, আমার নামে জরুরি বিভাগে আরও একজন আছেন, হয়ত তারা তাকে নিয়ে কথা বলছেন। অথচ ভুক্তভোগী বিলকিসসহ একাধিক রোগী সরাসরি ২৩ নম্বর কক্ষটি দেখিয়ে বলেন, এই রুমেই ডা. ফাহিম বসেন এবং তিনিই নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে পাঠিয়েছেন।
তাদের বক্তব্য নেওয়ার সময় ডাক্তার কর্তৃক অন্য একজন স্টাফ দ্বারা গণমাধ্যম কর্মীদের ছবি ও ফুটেজ তুলে রাখেন এই দুই ডাক্তার।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহেল রানার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিষয়টির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে এবং পরবর্তী প্রতিবেদনে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।