টেকনাফে ‘বিষাক্ত ভাইরাস’ আতঙ্ক, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
- হাবিবুর রহমান, টেকনাফ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ০৮:১৬ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ১০:৩০ PM
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অজানা এক বিষাক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারাও রয়েছেন বড় অংশে। জানা গেছে, ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই এই অজানা রোগে ভুগছেন।
স্থানীয় সূত্র ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে উখিয়া-টেকনাফের ঘরে ঘরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরিচিত কোনো ভাইরাসের সঙ্গে মিলে না, ফলে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব হয়নি।
রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে প্রচণ্ড জ্বর, গায়ে ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ার অরুচি, সর্দি-কাশি ও দুর্বলতা। আক্রান্তদের অনেকেই বলছেন, এ রোগে শিরা-শিরায় ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে স্বাভাবিক চলাফেরাও কঠিন হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. এনামুল হক বলেন, ‘রোগীদের মধ্যে সাধারণভাবে দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি-কাশি ও প্রচণ্ড শরীরব্যথা। আমরা এটি ভাইরাসজনিত বলেই ধারণা করছি। তবে এটা কোন ধরনের ভাইরাস তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা কিছু স্যাম্পল সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। রিপোর্ট এলে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে।’
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহাজাহান নাজির জানান, ‘রোগটি নতুন ধরনের ভাইরাস হতে পারে। রোগীদের শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর, মারাত্মক গিরা ব্যথা, লাল র্যাশ দেখা যাচ্ছে। রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট অনেক সময় এক লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজারের মধ্যে নেমে যাচ্ছে। এমনকি চিকনগুনিয়া পরীক্ষাতেও নেগেটিভ ফল আসছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা জহির আহমেদ বলেন, ‘রোগটার কোনো নাম জানি না। কিন্তু টেকনাফজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এটা। শরীরের শিরা-শিরায় অসহ্য ব্যথা হয়। খাওয়া-দাওয়া করতে মন চায় না। প্রচণ্ড জ্বর আসে। ছোট-বড় সবাই আক্রান্ত হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ ভাইরাসটি নতুন কোনো স্ট্রেইন বা বৈচিত্র্যযুক্ত ভাইরাস হতে পারে, যা পূর্বে এ অঞ্চলে দেখা যায়নি। তারা এটিকে মশাবাহিত ভাইরাস নাকি অন্য কোনো উৎস থেকে ছড়াচ্ছে, তাও নিশ্চিত করতে পারেননি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), কিংবা টেকনাফে কর্মরত জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরের চিকিৎসকদের পক্ষ থেকেও এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
স্থানীয়রা দ্রুত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।