রাহাত হোসেন শরীফ © সংগৃহীত
বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষার পথচলা শুরু করেছিল রাহাত হোসেন শরীফ। লক্ষ্য ছিল জার্মানিতে গিয়ে পড়াশোনা করে নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যত গড়বে। কিন্তু একটি বুলেট সবকিছু থামিয়ে দিল। নিভিয়ে দিল এক সম্ভাবনাময় তরুণের জীবন প্রদীপ।
মাত্র ক'দিন আগেই ১৪ জুলাই ঢাকার উত্তরা আজমপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিল রাহাত। ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিজে নিজেই জার্মান ভাষা শেখা শুরু করেছিল। বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন তার চোখে-মুখে জ্বলজ্বল করছিল।
কিন্তু ১৮ জুলাই বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বের হওয়ার পর আর ফেরা হয়নি তার। সে দিন ঢাকার উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যায় রাহাত। হঠাৎ একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে সেখানেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে।
তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাহাতকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাহাত নরসিংদীর রায়পুরা থানার বাহেচর গ্রামের মো. সেলিম ফারাজী ও স্বপ্না আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান। টঙ্গী শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছিল সে।
ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা স্বপ্না আক্তার। তিনি জানান, ‘আমার ছেলে নিয়মিত নামাজ পড়ত, কারো সঙ্গে উচ্চবাচ্য করত না, কোনো রাজনৈতিক দল বা কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সে শুধু পড়াশোনা নিয়ে ছিল। জার্মানিতে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখত। ইউটিউবে ভাষা শিখছিল। আমরা স্বল্প আয়ে চললেও ওর স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখন আমাদের সব শেষ।’
ছেলের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে ঢাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে দুই মাস পর গ্রামে ফিরে গেছেন স্বপ্না আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০ বছরের সংসারে একটাই সন্তান ছিল আমাদের। এখনো ওর ছবি বুকে নিয়ে ঘুমাই। কাঁদতে কাঁদতে কখনো মূর্ছা যাই।’
রাহাতের বাবা সেলিম ফারাজী বর্তমানে সৌদি আরবে প্রবাসী। কড়াকড়ি ছুটিনীতির কারণে ছেলের মৃত্যুর সময় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি।
রাহাতকে গ্রামের বাড়িতে তার দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। সেই কবরের পাশেই দাঁড়িয়ে স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘রাহাত শুধু আমাদের ছেলে ছিল না, সে ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র আশা। সেই গুলি শুধু আমার ছেলেকে হত্যা করেনি, আমাদের ভবিষ্যৎকেও শেষ করে দিয়েছে। আমি জানতে চাই, আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? আমি তার হত্যার বিচার চাই।’
সূত্র: বাসস।