গোপালগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে এএসপি পলাশ সাহার শেষকৃত্য সম্পন্ন

এএসপি পলাশ সাহার শেষকৃত্য
এএসপি পলাশ সাহার শেষকৃত্য  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যার খবর যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামে চলছে শোকের মাতম। এলাকাবাসী একনজর দেখতে পলাশের বাড়িতে ভিড় করে। পরিবারের লোকজন পলাশের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রীকে দায়ী করে তার শাস্তির দাবি জানায়।

র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর উপজেলার পাড়কোনা মহাশ্মশানে র‌্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাবের পাহারায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসা হয়।

অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ বের করার পর রাখা হয় উঠানে। এসময় মা রমা রানী সাহা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। পলাশকে এক নজর দেখতে আসা লোকজনেরও চোখ ভারী হয়ে ওঠে। মৃত পলাশের মা কান্নার মধ্যে বারবার ছেলের বউয়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এএসপি পলাশ সাহা কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে পালাশ ছিল সবার ছোট। কোটালীপাড়া পাবলিক ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে পলাশ ঢাকায় চলে যায় উচ্চ শিক্ষার জন্য। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হলেও পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। স্নাতকোত্তর শেষ করে সাব রেজিস্টার হিসেবে যোগ দেন কর্মজীবনে। আরো ভালো কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় বসেন পলাশ সাহা। যেখানেই পরীক্ষা দেন সেখানেই চাকরি হয়ে যায় তার। একে একে পুলিশের এসআই, আনসারের সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসএ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেলেও কোনোটায় যোগ দেননি তিনি। ৩৭তম বিসিএসএ পুলিশ ক্যাডারের এএসপি হিসেবে চাকরি হলে সাব রেজিষ্টারের চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দেন। 

এদিকে পলাশ সাহার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না গ্রামবাসী। তার এভাবে চলে যাওয়ায় আমরা এলাকাবাসী শোকাহত।

দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এর আগে র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এএসপি পলাশ সাহার বড় ভাই লিটন সাহা জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাবাকে হারাই। তুখোড় মেধাবী ছোট দুই ভাইয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরি। এসবি সদর দপ্তরে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিয়ে করে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন তিনি।

স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করেই পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করে তার মেঝ ভাই নন্দ লাল সাহা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই পলাশের স্ত্রী সুষ্মিতা সাহা টিনটিন মাকে দেখতে পারতো না। মা পলাশের সঙ্গে থাকুক তা চাইতো না টিনটিন। এ নিয়ে ঝগড়া সবসময় লেগে থাকতো। পলাশ মাকে খুব ভালোবাসতো। সে চাইতো মা তাকে ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাক।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক মাস হলো পলাশ র‌্যাবে যোগ দিয়ে চট্টগ্রামে গেলে সেখানেও স্ত্রী এবং মাকে নিয়ে যায়। এই নিয়ে পলাশের সঙ্গে টিনটিনের ব্যাপক ঝগড়া হয়। আমরা মাকে গ্রামে রাখতে চাইলে সেও পলাশকে ছাড়া থাকতে নারাজ। মা ও স্ত্রী দুজনকেই প্রচণ্ড ভালোবাসতো পলাশ। এই ভালোবাসাই আজ কাল হলো। সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার জলাঞ্জলি দিয়ে স্ত্রীর উপর অভিমান করে আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না।’

উল্লেখ্য, বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২ টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। 

ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।‬‎’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence