নারী চিকিৎসকের উপর সমন্বয়কের হামলার ঘটনায় কর্মবিরতি, দুর্ভোগে রোগীরা

কর্মবিরতি
কর্মবিরতি  © টিডিসি ফটো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাত্র সমন্বয়ক কর্তৃক এক নারী চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক-কর্মচারীরা। এতে শনিবার (১২ এপ্রিল) চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। 

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ। চিকিৎসকদের কক্ষে তালা ঝুলছে। হাসপাতাল চত্বর বহির্বিভাগের সামনে ও বারান্দায় রোগীদের জটলা। অনেকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ (৩০) ওই রোগীকে হৃদরোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। 

জানা যায়, এ সময় সেখানে রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার তুর্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তারাগঞ্জের ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আরও চার পাঁচজনসহ চিকিৎসক মৌকে অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করেন এবং চিকিৎসকের শরীরে আঘাত করে।

এ ঘটনায় ওই চিকিৎসক তুর্যসহ অজ্ঞাতনামা চার পাঁচজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে তারাগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত তাহমিদ সরকার তুর্য বলেন, ‘আমার বাবা হাসপাতালে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। ওই চিকিৎসককে বারবার দেখার জন্য অনুরোধ করছিলাম। তিনি না শুনে উলটো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছে।’ 

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ জানান, আন্দোলনকারীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শুধু সমন্বয়ক শব্দটা ব্যবহার করে তাদের করা বিভিন্ন অনিয়ম ঢাকার চেষ্টা করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছেলেরা ইতঃপূর্বে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা সুযোগ নিয়ে এটাকে ইস্যু করে আগের কুকীর্তি ঢাকতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ডমিনেট করতে চাচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, ‘গত পরশু থেকে তাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে, দুই বার বসা হয়েছে সেখানে। তারা কোনো ক্যামেরার ফুটেজ শেয়ার করছেনা, যাকে ভিক্টিম হিসেবে উপস্থাপন করছে বসার সময় তাকেও নিচ্ছেনা। এমনকি সিভিল সার্জন নিজে সেখানে উপস্থিত থাকছে অথচ বসছেনা ‘ এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর চিকিৎসক দেখাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন জগদীশপুর গ্রামের বৃদ্ধা মজিফা বেগম। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘বুকে ব্যথা। ব্যথাতে সারারাত ঘুমাতে পারি নাই। সকাল ৯টায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছিলাম। কিন্তু দুই ঘণ্টা বসে থেকেও কোনো চিকিৎসা পাইনি। বাড়ি ফেরত যাচ্ছি।’  

জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার অর্নিবান মল্লিক বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত হামলাকারী গ্রেপ্তার হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’ 

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকদের পুলিশি প্রটেকশন দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।’

 


সর্বশেষ সংবাদ