বাংলাদেশি নেবে না জাপান, দালালের খপ্পরে না পড়ার পরামর্শ
- শিউলী রহমান
- প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৭ AM , আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:০৬ PM
জাপানে কর্মসংস্থানের আশায় অসাধু ব্যক্তিদের সাথে আর্থিক লেনদেন না করতে সর্তক করে দিয়েছে টোকিওস্থ বাংলাদেশি দূতাবাস। সম্প্রতি জাপানে ক্রমবর্ধমান কর্মী সংকটের কারণে আগামী পাঁচ বছর দেশটির বিভিন্ন খাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিদেশি কর্মী নেয়া হবে। তবে যেসব দেশ থেকে কর্মী নেয়া হবে; তার তালিকায় বাংলাদেশ নেই। তাই প্রলোভনে পড়ে দালালদের সাথে আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাপানে বিদেশি কর্মী নিয়োগের সংবাদে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বাংলাদেশিদের জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। সূত্রের তথ্য, জনশক্তি রপ্তানির সাথে জড়িত কয়েকটি এজেন্সি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এর আগেও লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
মূলত: এমন সব খবরের প্রেক্ষিতেই জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলছে, জাপানে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান কর্মী সংকেটের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি জাপানে সরাসরি কর্মী নিয়োগের একটি আইন পাশ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আটটি দেশ (ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মায়ানমার এবং পূর্ব এশিয়ার আরো একটি দেশ) নির্বাচন করা হয়েছে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা জানান, এ বিষয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হচ্ছে- যদিও যেসব দেশ থেকে আপাতত কর্মী নেয়া হবে তার তালিকায় বাংলাদেশ নেই। এ কারণে বাংলাদেশ দূতাবাস অনেকটা বাধ্য হয়েই বিবৃতিটি দিয়েছে। তিনি জানান, জাপানে বিদেশী কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে একটি আইন পাশ হয়েছে এবং ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবে। প্রাথমিকভাবে এ জন্য আটটি পূর্ব-এশীয় দেশকে নির্বাচন করা হয়েছে; যেগুলো থেকে ঐতিহ্যগতভাবেই লোকেরা জাপানে কাজ করতে আসতেন। তাদের নির্মাণ, রেস্তোরাঁ, কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগ দেয়া হবে। তবে সম্ভাব্য এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
তিনি বলেন, ‘জাপানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন এবং সক্রিয়ভাবে বিবেচনার আশ্বাসও দিয়েছেন।’
বাংলাদেশে এ ধরণের তৎপরতা কতটা চলছে- সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে কথা হয় জনশক্তি রপ্তানি এজেন্সিগুলোর প্রতিষ্ঠান বায়রা'র আবুল বাশারের সাথে। তিনি দু’মেয়াদে সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। তিনি জানান, তাদের সংগঠনে ১২শ’ এজেন্সি আছে। তবে জাপানে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে কেউ অর্থ নিচ্ছে এমন খবর তিনি জানেন না। তাদের সংগঠনের বাইরে এমন দালাল চক্রের অস্তিত্ব আছে; যারা অতীতেও জাপানে শ্রমিক-কর্মী পাঠানোর কথা বলে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে। তাই বাইরের দেশে যেতে আগ্রহীদের সঠিক তথ্য নিয়ে আর্থিক লেনদেন করার অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর্মী নেবার ব্যাপারে জাপান সরকারের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে কেউ যেন এরকম দালালের খপ্পরে না পড়েন, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, জাপানে এখন ১৫-১৬ হাজার বাংলাদেশী এখন অবস্থান করছেন। যারা মূলত অপেক্ষাকৃত উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন কর্মী। তথ্য প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এসব খাতে বেশ কিছু বাংলাদেশি কাজ করছেন এবং এসব খাতে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে পাঁচবছর মেয়াদের নিয়োগ নিয়ে কাজের সুযোগ আগের মতই অব্যাহত থাকছে। তবে জাপানে বিদেশীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শর্ত হলো জাপানী ভাষা শেখা, তা ছাড়াও জাপানের জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে নেবার জন্য অন্যান্য কিছু ‘লাইফ স্কিল’ এবং ‘কর্মসংস্কৃতি’ সম্পর্কেও তাদের অবহিত হতে হবে।
এছাড়া বিবৃতিতে জাপানে সরাসরি কর্মী নিয়োগ কিংবা টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়োগের বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বলা হয়। যে কোন তথ্য জানার জন্য সরাসরি টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কিংবা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।