ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন মিছে এ ভালোবাসা

  © টিডিসি ফটো

‘ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন মিছে এ ভালোবাসা’— অসাধারণ সব উপন্যাসের কারিগর হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথা সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলেও গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক।

‘তিথির নীল তোয়ালে’ উপন্যাসের গল্প হুমায়ুন আহমেদের চিরাচরিত উপন্যাসগুলোর মতোই সাবলীলভাবে এগিয়েছে। উপন্যাসের শুরুতে দেখা যায় তিথির বাবা জাফর সাহেবের অতিমাত্রায় মেজাজের বহিঃপ্রকাশের ফলস্বরূপ তিথির মা শায়লা রাগারাগি করে তার মায়ের বাসায় চলে যায়।

তিথির আছে মায়ায় ঘেরা খুব নরম একটা মন। তার বাবাকে সে মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। মা চলে যাওয়ার পর বাবা আর সে যখন অপটু হাতে ঘর সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তখনই গ্রাম থেকে নুরুজ্জামান নামক জনৈক যুবক এসে হাজির। তিনি এসেছেন গ্রামের স্কুলের কাজে। তার ব্যবহারে তিথি বারবার অবাক হলেও তিথির বাবা খুবই বিরক্ত। তবুও তারা কেউই নুরুজ্জামানকে কিছু বলে না। পরিবারের একজনের মতোই আপন করে নেয়।

তিথি যেই ছেলেটিকে ভালোবাসে তার নাম মারুফ। মারুফও তিথিকে অনেক ভালোবাসে। চার বছর ধরে প্রাইভেট টিউশনি করিয়ে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছে মারুফ। এমন ছেলের কাছে তো কেউ মেয়ে বিয়ে দিবে না! তাই তিথিকে বিয়ে করার জন্য সে পদে পদে তিথির সাথে মিথ্যে বলা শুরু করে। তিথি তার সব কথা বিশ্বাস করে বাবাকে বিয়ের কথা জানায়। তার বাবা বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। এবার মাকে রাজি করার পালা। তিথি মারুফকে সাথে নিয়ে সিলেট মার সামনে গিয়ে হাজির হয়। তার মা ও বিয়েতে রাজি হয়।

বিয়ের একদিন আগে তিথি মারুফের সব পরিকল্পনা জেনে যায়। তার খুব কষ্ট হয়৷ তিথি তার নীল তোয়ালে মুখে চেপে খুব কাঁদে। ‘আমি একজন সাধারণ মানুষকে বিয়ে করতে চাই মা, যে কোনোরকম কৌশল জানে না’- মাকে বলা তিথির এই সংলাপেই বোঝা যায় সে কতটা কষ্ট পেয়েছে!

উপন্যাসের শেষে বড় ধরনের বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করে পুরো উপন্যাসে নির্বিকার থাকা নুরুজ্জামান। সে হয়তো তিথিকে ভালোবাসতো যা উপন্যাসের কোথাও স্পষ্টভাবে ধরা দেয়নি। এতো কিছুর পরও উপন্যাসটি কি পরিণতি পেয়েছিল? হ্যাঁ পেয়েছিল। তবে কি সেই পরিণতি? তিথি-মারুফের এতদিনের ভালোবাসার সম্পর্ক কি শেষ হয়ে যায়? নাকি ভয়ংকর কিছু ঘটে যায়? কি হয় এই সাদামাটা গল্পের শেষে?


‘তিথির নীল তোয়ালে’ এমন একটি উপন্যাস যার ধারা পাঠককে বইয়ের ভেতর টেনে নিয়ে যায়। একেবারে সাদামাটা কাহিনী, কোনো রহস্য নেই তবে হুমায়ুন আহমেদের খুব কম পরিণতি পাওয়া উপন্যাসের মধ্যে এটি একটি। প্রতিটি অনুচ্ছেদ শেষ হবার পর এক অদ্ভুত কৌতূহল কাজ করেছে পরের অনুচ্ছেদের প্রতি। ভালো লেগেছে অস্পষ্ট ভালোবাসা, ভালো লেগেছে লুকানো অভিমান, আরো ভালো লেগেছে বেপরোয়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

সাধারণ এই বইটির অসাধারণ কিছু কথা-

‘মিথ্যা বলা মানে আত্মার ক্ষয়। জন্মের সময় মানুষ বিশাল এক আত্মা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। মিথ্যা বলতে যখন শুরু করে তখন আত্মা ক্ষয় হতে থাকে৷ বৃদ্ধ বয়সে দেখা যায় আত্মার পুরোটাই ক্ষয় হয়ে গেছে।’

‘মেয়েরা চট করে রাগ ধুয়ে ফেলতে পারে না। তারা অনেকক্ষণ রাগ পোষে। পাখি পোষার মতো রাগ পুষেও তারা আনন্দ পায়।’

‘কাউকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসার মধ্যে এক ধরনের দুর্বলতা আছে। নিজেকে তখন তুচ্ছ এবং সামান্য মনে হয়৷ এই ব্যাপারটা নিজেকে ছোট করে দেয়।’

‘পৃথিবীর কোনো সুন্দর দৃশ্যই বোধহয় একনাগাড়ে বেশিক্ষণ দেখা যায় না। সুন্দর যেমন আকর্ষণ করে তেমনি বিকর্ষণও করে।’

‘প্রিয়জনকে মিথ্যা বলা বেশ শক্ত। মনের উপর চাপ পড়ে। অসতর্ক হলে মিথ্যার লজিক এলোমেলো হয়ে যায়। সত্য বলার সময় লজিকের দিকে খেয়াল রাখতে হয় না। মিথ্যার লজিক হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন লজিক। বোকা মানুষ এই জন্যই মিথ্যা বলতে পারে না।’

‘আলো পড়লে একখন্ড লোহাও মাঝেমধ্যে ঝলসে যায়। হীরক খন্ডের সার্বক্ষণিক দ্যুতি লোহার মধ্যে নেই।’

শিক্ষার্থী: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, লোক প্রশাসন বিভা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence