ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ধ্বংসের পথে আরো এক ধাপ...

  © টিডিসি ফটো

লাইব্রেরি বলতে সত্যিকার অর্থে কি বোঝায় আর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ কি চলছে? অনেক ভালো-মন্দ, আশা-হতাশার মাঝেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো বাংলাদেশের জন্য গৌরব করার মত জায়গা। যেমন ছিলো গৌরবোজ্জ্বল অতীত তেমন ছিলো গবেষণামূলক কাজের জন্য সুখ্যাতি। সত্যেন্দ্রনাথ বোসের মত শিক্ষকেরা গবেষণালব্ধ কাজ দিয়ে দেশে-বিদেশে পুরো দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছেন, প্রশংসিত করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে।  কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলো ঘুরে, গত কয়েক বছরের চিত্র থেকে যা দেখা যায় তা অত্যন্ত হতাশাজনক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার এবং হলের লাইব্রেরিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এমপিথ্রি, আজকের বিশ্ব, ওরাকল নামক কিছু নামি-বেনামি গাইড বইয়ের সমাহার।আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজ সকাল ৮ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই গাইড বইগুলো গলাধঃকরণ করছে। অন্যদিকে লাইব্রেরিতে গবেষণার জন্য যেই বিষয়ভিত্তিক বইগুলো রয়েছে, সেদিকে চোখ দেয়াই মুশকিল। ধুলোর আস্তরণে কোনো বই ধরা যায় না, বুক সেল্ফগুলো মাস কিংবা বছরে একবারও ছাত্র-ছাত্রীদের ছোঁয়া পায় কিনা তা নিয়েও আছে বিস্তর সন্দেহ। আর হলের লাইব্রেরিতে কোনোদিন সেল্ফ খুলতেও দেখা যায় না কাউকে। এই যদি হয় একটি জাতির গবেষণামূলক কাজের ব্যাপ্তি ও আগ্রহ, তাহলে সেই জাতি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার মত যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগে নিজ নিজ বিষয়ের জ্ঞানচর্চা করার জন্য সেমিনার লাইব্রেরি আছে।  এছাড়া কেউ যদি বিচিত্র বিষয়ে জ্ঞান অর্জন এবং গবেষণা করতে চায়, সেজন্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার রয়েছে। আছে অসংখ্য বইও। কিন্তু সেসব বই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে টানে না। হউক সে প্রথম বর্ষের কিংবা স্নাতক উত্তীর্ণ। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আসেন, যান বিজ্ঞান লাইব্রেরিসহ ডিপার্টমেন্ট ও হলের পাঠ কক্ষেও। তবে তাদের হাতে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, পদার্থ কিংবা রসায়ন বিদ্যার কোনো বই দেয়া যায় না।  নিউ মার্কেট ও নীলক্ষেতের মোড় থেকে কেনা কিছু অভিন্ন বইয়ের সামনে ঘাড় ভেঙ্গে পড়ে থাকে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী।  তাদের কারণে গবেষণামনস্কদের স্থান সংকুলান হয় না লাইব্রেরিতে।  

বিশ্ববিদ্যালয় মুখস্থ করার জায়গা না। এই সত্যটা বোঝা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে এই প্রজন্মের কাছে।  তাই কর্তৃপক্ষের কাছে সবিনয় নিবেদন, সময় থাকতে এসব অভিশাপ দূর করুন। অন্যথায় জাতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় যে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে সেখান থেকে আলোর মুখ দেখা খুব মুশকিল হয়ে যাবে।  ভবিষ্যতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া এই জাতিকে দেয়ার মত কিছুই থাকবে না আজকের তরুণদের কাছে। 

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।


সর্বশেষ সংবাদ