১০ তলা থেকে লাফিয়ে পড়া ছাত্রীকে ‘মানসিক অসুস্থ’ বলছে শেকৃবি

অস্বীকৃতি পরিবারের

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) আবাসিক হলের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করেছেন মারিয়া নামে এক ছাত্রী। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মারিয়ার চিকিৎসার জন্য কোনো আর্থিক সহযোগিতা করা হয়নি। শুধুমাত্র হল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মারিয়ার চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এমন আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শেকৃবির কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা হলের ১০ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন ওই ছাত্রী।

মারিয়ার সহপাঠিরা জানান, মারিয়া বেশকিছু দিন থেকে হতাশায় ভুগছিল। ওর বেশ কয়েকটা সিটি পরীক্ষা ডিউ ছিল। যেগুলো নিতে টিচাররা অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়া অসুস্থতার কারণে ক্লাস করতে পারেনি। ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়েও দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এটেন্ডেন্স এবং পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শেকৃবি প্রক্টর ড. হারুন অর রশিদ বলেন, এটেন্ডেন্স সম্পর্কিত কিছু না, বরং তার মানসিক অবস্থা ১ম বর্ষ থেকে খারাপ। যার জন্য তার ট্রিটমেন্ট চলছিলো।

আরও পড়ুন: শেকৃবির হলের ১০ তলা থেকে পড়ে গেলেন ছাত্রী

তিনি বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে ওষুধ খাওয়া মিস করেছিলেন তিনি (মারিয়া)। গতকাল বাসা থেকে এসেছে, বাসায় মোবাইলও রেখে এসেছিলেন।’’

মারিয়ার মানসিক ট্রিটমেন্ট চলতেছিল এমন তথ্য প্রক্টর কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে ড. হারুন বলেন, ‘‘তার দুলাভাইয়ের থেকে আমি এ কথা শুনেছি।’’

তবে মারিয়ার দুলাভাইকে সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। মারিয়া দীর্ঘদিন পেটের পীড়া ও জ্বরে আক্রান্ত ছিল। তবে তার কখনো কোনো মানসিক অসুস্থতা ছিল না।

মারিয়ার মা মারিয়ার মানসিক অসুস্থতার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার মেয়ে কখনো মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল না। ও দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। এর আগের সেমিস্টারে ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি ছিল।

‘‘তখন আমি ওর ডিন স্যারের সাথে দেখা করতে চাইলে উনি আমাকে বাসায় যেতে দেননি। উনি বাসার নীচেই টেলিফোনে আমাকে বলেন আপনার মেয়ে অসুস্থ থাকলে পরে এক্সাম দেবে। প্রয়োজন হলে সে পরের ব্যাচের সাথে পরীক্ষা দেবে। এখানে আমার করার কিছুই নেই।’’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, ওই ছাত্রী যে সেমিস্টারে আছে সেই সেমিস্টারের ক্লাস এখনো শেষ হয়নি। তার আগের সেমিস্টারেও তার কোনো মেকআপ পরীক্ষা নেই। তার মা কেন দুইদিন আগে হলে এসেছিল সেটাও জানতে হবে। মায়ের সঙ্গে তার ফ্যামিলিগত কি সমস্যা হয়েছে সেটাও জানতে হবে।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে মারিয়া মানসিক হাসপাতালে গিয়েছেন সে খবর আমরা জেনেছি। বিভিন্ন কারণে দুই দিন পরপরই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এগুলোর বিষয়েও জানতে হবে; এগুলা প্রকাশ করতে হবে। মারিয়া কোন মেন্টালে ভর্তি হয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত স্বরে বক্তব্য পরিবর্তন করে বলেন, মেন্টাল বলিনি, হসপিটাল বলেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মারিয়ার চিকিৎসার খরচ বহন করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ড. ফরহাদ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাকা মেডিকেল সরকারি মেডিকেল। ওখানে যা খরচ তা তার পরিবার থেকেই করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় করবে। এখনো ওরকম কোনো বড় খরচের প্রয়োজন হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ