গুচ্ছে আয় কমায় অসন্তোষ, ভর্তি ফি’র পুরোটাই পাবে বিশ্ববিদ্যালয়
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৯ AM , আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২২, ১১:১৬ AM
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষকদের আয় কমে যাওয়ায় গুচ্ছে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছিল বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ জটিলতা সমাধানে ভর্তি পরীক্ষার ফি বাবদ আদায় করা অর্থের পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এর ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তি আবেদন ফি বাবদ আদায় করা অর্থের পুরোটাই ব্যয় করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগে ভর্তি পরীক্ষার ফি বাবদ আদায় করা অর্থের ৬০ শতাংশ পরীক্ষার খরচ বাবদ ব্যয় করতে পারত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা রাখতে হতো। এই ৪০ শতাংশ অর্থ পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেটের সঙ্গে যোগ করা হতো। এখন ওই অর্থ ব্যয়ের অনুমতি দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় সরকারের ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সভায় মৌখিকভাবে এ সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আবেদন ফি সহনীয় পর্যায়ে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ইউজিসি। এ ছাড়া এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসি বলছে, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার কারণে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতিতে অনীহা প্রকাশ করে। এটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে আর্থিক সমস্যার বিষয়টি সামনে চলে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন গুচ্ছের বাইরে না যায়, সেজন্য তাদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যদিও ইউজিসির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেননি ইউজিসিরই কয়েকজন কর্মকর্তা।
তারা বলছেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষকদের আয় কমে গেছে। একজন শিক্ষকের এক শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে প্রায় এক থেকে দুই লাখ আয় হত। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন শিক্ষক নেতারা। তাদের গুচ্ছে রাখতেই এই ছাড়া দিতে হচ্ছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বার্ষিক বাজেটের ওপর প্রভাব ফেলবে। সরকারের ওপরও বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন: সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত—দেখে নিন কোনটি কবে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কিছু সমস্যা থাকলেও শিক্ষার্থীদের কষ্ট অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে। তবে শিক্ষকদের আয়ের বড় একটি উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা গুচ্ছে থাকতে অনীহা প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমাদের এ ছাড় দিতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি ফি’র ৬০ শতাংশ ব্যয় করতে পারত। ৪০ শতাংশ অর্থ তাদের কোষাগারে জমা রাখতে হতো। তারা যখন ইউজিসির কাছে বাজেট দিত তখন এই ভর্তি ফি’র অর্থ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা বরাদ্দ দেয়া হত। এতে সরকারের অর্থ সঞ্চয় হতো। তবে এখন ভর্তি ফি’র পুরোটাই ব্যয় করতে পারবে তারা। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা বাড়তি খরচ হবে।’
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষকদের আয় কমে যাওয়ার সত্যতা মিলেছে গুচ্ছভুক্ত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলে। তারা জানিয়েছেন, একটি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শিক্ষকদের বেশ কিছু টাকা আয় হয়। তবে গুচ্ছের কারণে তা একেবারেই কমে গেছে। এতে শিক্ষকেরা গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি তোলেন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তাদের দাবিতে অনড় ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুচ্ছভুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা থেকে আমি মাত্র ১৪ হাজার টাকা পেয়েছি। এর আগের বছরের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আমার এই আয় ছিল এর চেয়ে ৭-৮ গুন বেশি। একজন উপাচার্য হয়ে যদি আমার এই আয় হয়, তাহলে আমাদের শিক্ষকদের আয়ের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। এ কারণে আমাদের কিছু শিক্ষকের মাঝে ক্ষোভ ছিল। তবে আমরা তাদের বুঝিয়েছি। ইউজিসি যে উদ্যোগ নিয়েছে আশা করছি, এখন এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: পড়া না পারায় ছাত্রকে দিয়ে ছাত্রীর গালে চড় মারালেন শিক্ষক
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার সময় আবেদন ফি বাবদ ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে যে টাকা আদায় করা হয়, এর ৬০ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, কেন্দ্র ভাড়াসহ পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় করা হয়। তবে আদায় করা অর্থের সিকিভাগই চলে যেত দায়িত্ব পালনরত শিক্ষকদের ফি দিতে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আয়ের এই উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগহণে অনীহা জানায়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গত বৃহস্পতিবার ইউজিসির কনফারেন্স রুমে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনার সময় উপাচার্যরা ভর্তি ফি’র পুরোটা ব্যয় করতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এটি নিয়ে আপত্তি জানালে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম ভর্তি পরীক্ষার জন্য আদায় করা অর্থের পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যয় করার পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যারা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে তারা ভর্তি ফি বাবদ আদায় করা অর্থের পুরোটাই ব্যয় করতে পারবে। তবে যারা গুচ্ছে যাবে না তাদের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বহাল থাকবে।
ভর্তি ফি’র পুরোটা ব্যয় করতে দেয়ায় সরকারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আর্থিক বিষয়টি বিবেচনা করলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করা যাবে না। ইউজিসি ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা থেকে শিক্ষকদের আয়ের মানসিকতা পরিহারের আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যারা শিক্ষকতা পেশায় আসেন তাদের উচিত আর্থিক সুবিধা না খোঁজা। শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া অর্থ দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করা অত্যন্ত হীনমন্যতার কাজ। এটি থেকে শিক্ষকদের বেরিয়ে আসতে হবে।