এসএসসি-এইচএসসি

সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের বিপক্ষে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা, সায় নেই কর্তৃপক্ষের

এসএসসি পরীক্ষার্থী
এসএসসি পরীক্ষার্থী  © সংগৃহীত

চলতি বছর এসএসসিতে তিনটি ও এইচএসসিতে একটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে না। এই বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নম্বর দেয়া হবে। এদিকে এবারের পরীক্ষায় মানবন্টনের পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে সময়ও। মানবন্টন এবং সময় বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি না থাকলেও সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এবার এসএসসিতে আইসিটি, ধর্মীয় শিক্ষা এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এইচএসসিতে হবেনা আইসিটি পরীক্ষা। যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হবেনা সেসব বিষয়ে জেএসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে দেয়া হবে এসএসসির নম্বর। এতে করে যারা জেএসসি পরীক্ষায় এসব বিষয়ে ভালো ফলাফল করতে পারেনি তাদের এসএসসিতেও ভালো ফলাফল করার সুযোগ নেই। একই পদ্ধতিতে জেএসসি, এসএসসির নম্বরের উপর ভিত্তি করে দেয়া হবে এইচএসসি নম্বর। অনুরূপভাবে যারা জেএসসি-এসএসসিতে ভালো নম্বর পায়নি তারা এইচএসসিতেও ভালো নম্বর পাবেনা। এমন আশংকা থেকেই এই পদ্ধতিতে অসন্তোষ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

আরও পড়ুন: আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে ফলাফর তৈরি করার কথা শুনে অনেক শিক্ষার্থী হতাশা প্রকাশ করেছে। ফেনী সিটি গার্লস হাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাবরিনা পায়েল নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন শুনেছি সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি হবে তখন থেকে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। জেএসসিতে আমার একটা বিষয় ভালো হয়নি এখন আমি অন্য বিষয়ে যতই ভালো করি ওই বিষয়টাতে তো আর ভালো নম্বর পাবো না।

নওগাঁ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের আরেক পরীক্ষার্থী জিসান বলেন, জেএসসির সময় আমার নানু মারা যাওয়ার কারণে আমি ২টা বিষয়ে ভালো করে পরীক্ষা দিতে পারিনি। এখন শুনছি ওই সব বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নম্বর দিবে। এটাতো আমাদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। আমাদেরকে সুযোগ দেয়া উচিত নয়তো অন্য কোন পদ্ধতিতে নাম্বারিং করার দাবি জানাই।

তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক হোসনে আরা বলেন, এটা কোন মান যাচাইয়ের পদ্ধতি হতে পারে না। ছেলে-মেয়েরা এখন আর আগের মত পড়তে চায় না। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। পড়তে বললে, বলে এত পড়ে কি হবে। রেজাল্টতো ঠিক করাই আছে। তখন আর কোন উত্তর দিতে পারি না। হয় সবগুলো বিষয় পরীক্ষা নেয়া উচিত নয়তো এ পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।

রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়য়ের আরেক এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক শ্যামল কান্তি দাস বলেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীর সাথে অবিচার করা হয়। এত করে মেধার মূল্যায়ন হয় না। কোন কারণে একাটা বোর্ড পরীক্ষা খারাপ হতেই পারে তাই বলে সেটার মাশুল পরবর্তী পরীক্ষায় দিতে হবে এটা উচিত নয়। অতীতে আমারা দেখেছি অনেক শিক্ষার্থী জেএসসিতে খারাপ করেও এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস/এ প্লাস পেয়েছে। কিন্তু সাবজেক্ট ম্যাপিং এর কারণে শিক্ষার্থীরা এখন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিজেদেরকে পরিবর্তনের সুযোগ পাচ্ছেনা। বিষয়টি যথাযথ কর্তপক্ষ অনুধাবন করে একটি বিকল্প সিদ্ধান্তে আসা উচিত বলে মনে করি।

আরও পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ১ এপ্রিল, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

ফেনী সিটি গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম মামুনুর রশিদ বলেন, একজন শিক্ষার্থী সব সময় একই মানের থাকে না। তাদের মাঝে পরিবর্তন আসে। জেএসসিতে অনেকে খারাপ করলেও এসএসসিতে ঘুরে দাঁড়ায়। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন থাকে এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে ভালো কোন কলেজে ভর্তি হওয়া। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের পথে বাঁধা এই সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি। আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে নিকট দাবি জানাই বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য।

গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ পদ্ধতির একটি নেতিবাচক দিক হলো অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষাথী জেএসসিতে ভালো ফলাফল করলো সে অনুযায়ী সে এসএসিতেও ভালো করবে। অন্যদিকে কোন প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থী জেএসসিতে খারাপ করার কারণে এসএসসিতেও রেজাল্ট খারাপ হলো। এতে করে সে ভালো শিক্ষার্থী হয়েও এইচএসসিতে ভালো কোন কলেজে ভর্তি হতে পারলো না। বিপরীত দিকে দুর্বল শিক্ষার্থী ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। তাহলে এখানে কিন্তু মেধাবীরা যেমন বঞ্চিত হবে তেমনি কলেজও ভালো শিক্ষার্থী পাবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কারো করো আপত্তি থাকবেই। সবাইকে তো আর সন্তুষ্ট করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করে দেখেছে যে শিক্ষার্থীরা সব সময় বেশি নম্বর পায় জেএসএসসিতে, এসএসসিতে আরেকটু কমে, এইচএসসিত আরো কমে যায়। এটি হচ্ছে ক্রমধারা। এক-দুজন একটু ব্যতিক্রম থাকে। এখন যেহেতু জেএসসি, এসএসসির নম্বর যোগ করা হচ্ছে সেহেতু অধিকাংশ শিক্ষার্থীর নম্বর বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে জিপিএ-৫ বাড়ছে, পাশের হার বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, আর পরীক্ষা দিলে তো পাশ করতো ৭০% এখন তো ১০০% পাশ করছে। যারা এটা বলে, যুক্তি দেয় তাদের সংখ্যা সামান্য। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এটার পক্ষে। আর এটি হচ্ছে বিশেষজ্ঞ যেই কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের সিদ্ধান্ত না।


সর্বশেষ সংবাদ