ডাক্তার হওয়ার দৌড়ে ছেলেদের তুলনায় যে কারণে এগিয়ে মেয়েরা

  © ফাইল ফটো

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৯ হাজার ৪১৩ জন। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে সাড়ে ১০ হাজারেরও বেশি আসনে মেধাক্রম অনুসারে উক্তীর্ণরা এবার ভর্তির সুযোগ পাবেন।

ঘোষিত ফলাফলে দেখো গেছে,  এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন রেকর্ড সংখ্যক ৪৯ হাজার ৪১৩ জন। এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৬ হাজার ৫৩১ জন। আর ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ হাজার ৮৮২ জন। তিন হাজার ৬৪৯ জন মেয়ে ডাক্তার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।

দেশের অন্য অনেক পরীক্ষার মতো ভবিষ্যত ডাক্তার হওয়ার দৌড়ে মেয়েদের এভাবে এগিয়ে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সবাই। তবে ছেলেদের ব্যাপকহারে পিছিয়ে পড়াতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিশেষত, ছেলেরা পড়াশোনার বাইরে নানা ধরণের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগের পরিমাণ বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন, নানা কারণে মেয়েদের নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি। ফলে তারা সবসময় তাদেরকে নজরে রাখেন। এছাড়া তাদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগ্রহ কম। বিপরীতে ছেলেরা পড়াশোনার তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রযুক্তিকেন্দ্রীক নানা কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করছেন। অনেকক্ষেত্রে অভিভাবকরা চাইলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ফলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছেন তারা।

এছাড়া কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন ধরণের ফলহীন আড্ডায়ও ছেলেদের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরণের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে ফল আরও খারাপ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

মেডিকেল পড়াশোনা শেষ করতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়াকেও বড় কারণ বলছেন অনেকে। জানা গেছে, মেডিকেল পড়াশোনা শেষ করতে ৬/৭ বছর ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনাও অনেক জটিল ও কঠিন। ফলে ছেলেদের আগ্রহ এক্ষেত্রে কমে যাওয়ায় তারা মেডিকেলের তুলনায় অন্য ক্ষেত্রগুলোতে বেশি আগ্রহ দেকোচ্ছেন। আর্থিক কারণও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আফসানা মিমি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মেডিকেল পড়াশোনায় অনেক চাপ থাকার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। পরিবারের প্রতি ছেলেদের দায়ও বেশি। ফলে অল্প সময়ে পড়াশোনা শেষ করার একটা তাড়া থাকে। আর্থিক সাপোর্টও মেয়েদের বেশি। এজন্য ক্যারিয়ারসহ আনুষঙ্গিক কথা চিন্তা করে মেডিকেলে ছেলেদের আগ্রহ কমছে বলে আমার মনে হয়।’

চলতি বছরের ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার জাতীয় মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন রাগীব নূর অমিয়। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তৌফিকা রহমান। গতবছরও দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন একজন মেয়ে উম্মে শেফা আইরিন। আর তৃতীয় হয়েছেন সুইটি সাদেক।

এছাড়া মেধাতালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছেন যথাক্রমে, মাসুমা রহমান, রাফসান রহমান খান, নাফিস ফুয়াদ নিবির, নিয়াজ রহমান, সাবরিনা মুশতারী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, খাইরুন নাহার আন্নি। সবমিলিয়ে প্রথম দশজনে পাঁচ জনই মেয়ে। পড়োশোনায় মনোযোগী থাকা এবং প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে মেয়েদের দূরে থাকার কারণে এ ফল অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

মেডিকেল ভর্তির শীর্ষস্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হাসানুল বারী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এখন মেয়েদের ক্ষেত্রে অভিভাবরা অনেক বেশি সচেতন। এছাড়া তারা প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কম সক্রিয়। অথচ ছেলেরা আড্ডাবাজি কিংবা প্রযুক্তিতে বেশি সময় ব্যয় করছেন। ক্লাসের সময়েও এ ধরণের প্রবনতা দেখা যায়। ফলে ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে বলে আমার মনে হয়।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়া ডা. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে এটা খুবই ভালো দিক, তাদের ক্ষমতায়ন বাড়ছে। এ ধরণের পরীক্ষায় আনুপাতিক হারে তারা ভালো করে আসছে। তবে ছেলেরা ঘরের বাইরের কাজে বেশি জড়িয়ে পড়ায় কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে।’

গত ১১ অক্টোবর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ১০ হাজার ৪০৪ আসনের বিপরীতে অংশ নেন ৬৯ হাজার ৪০৫ জন। মেধাক্রম অনুযায়ী, সরকারি মেডিকেলে এমবিবিএস প্রথমবর্ষ ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ২২ অক্টোবর। এ প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। এরপরই বেসরকারি মেডিকেলগুলোয় এমবিবিএস প্রথমবর্ষের ভর্তি  প্রক্রিয়া শুরু হবে।


সর্বশেষ সংবাদ