বারবার ব্যর্থতায় জেদ, অধ্যবসায়ে বিসিএস ক্যাডার সাথী
- শরিফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২০, ১১:২২ AM , আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০, ১২:৪২ PM
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নূরুন্নাহার সাথী ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি ফরেস্ট্র ক্যাডারে মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান অর্জন করেছেন। তাঁর পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল এ ক্যাডার। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন।
১৯৯১ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন সাথী। ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার শিবনগর গ্রামের মো. হামিদুল ইসলাম (অবসার প্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল) ও নারগিস ইসলামের (গৃহিণী) তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সাথী। স্বামী মো: মাহবুবুর রহমান উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর। বড়বোন জেসমিন আক্তার। আর ছোটভাই নাইম পারভেজ রাজু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ছেন।
সাথী বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৯৪ পেয়ে ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করেছেন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ও বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০০৮ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনে ভর্তি হন।
বিসিএস জয়ের গল্প:
ছোটবেলা থেকে নূরুন্নাহার সাথী অসম্ভব মেধাবী ছিলেন এইজন্য বাবা-মা ও শিক্ষকদের আদর যত্ন একটু বেশিই পেতেন। তখন থেকেই ভাবতেন বড় কিছু হয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে স্বামী মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে কোলজুড়ে আসে আবরার ফাইয়াজ সাদিত। ছেলে বর্তমানে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। সংসার সামলানোর সাথে সাথে যোগ হয় আরও বড় দায়িত্ব সন্তানকে দেখাশোনা করা। তবে কখনো হাল ছেড়ে দেননি। এতসব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঠিকমত কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
মাস্টার্সের প্রথমবর্ষ থেকে অল্প অল্প বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন এবং মাস্টার্স শেষ করার পর পুরোপুরিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি। সারাদিন সংসারের কাজ শেষে রাতের বেলা বিসিএসের প্রস্তুতি নিতেন। এর আগেও বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু সঠিকভাবে প্রিপারেশনের অভাবে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে সাথী বলেন, ‘এরপর অসম্ভব জেদ চেপে যায়। যেভাবে হোক বিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়া চাই। এমনটাই দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রস্তুতি নিই। যার ফলে ৩৮তম বিসিএস এ সফল হই। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩৮তম বিসিএস তৃতীয় সরকারি চাকরি।’
বিসিএসের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া শুরু হয় ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে। মাঝে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন তাই পরপর আরও চারটি সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন যার সবগুলোতে ভাইভা পর্যন্ত গিয়েছেন। দুইটিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং বাকি দুইটির ভাইভার জন্য অপেক্ষায় আছেন (করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতির জন্য আপতত বন্ধ রয়েছে)। সরকারি প্রাইমারী স্কুলে ৩/৪ মাস শিক্ষকতা করে ছেড়ে দিয়েছেন। বাকি দুইটাতে আর অংশগ্রহণ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তাঁর সফলতার পেছনের গল্প জানাতে গিয়ে বলেন, প্রতিটা সফলতার পেছনে রয়েছে কারও না কারও ব্যাপক অনুপ্রেরণা। নূরুন্নাহার সাথীর পাশে সবসময় থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন স্বামী মো. মাহবুবুর রহমান। পড়াশোনা শেষ করা থেকে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া সবকিছুতেই সফলভাবে অবদান রেখে গেছেন তার স্বামী। রাতের নিরিবিলি সময়ে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকত তখন সবচেয়ে বেশি চাকরির প্রস্তুতি নিতেন। পড়াশোনার সময় তার স্বামী বাচ্চাকে দেখাশোনা করতেন এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতেন। স্বামীর আত্মত্যাগ তাকে আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগাতো।
যখনই কোন হতাশা তাকে ঘিরে ধরত তখন তার স্বামী এভাবেই উৎসাহ দিত- তুমি পারবে, তোমাকে দিয়ে হবে, কখনো হাল ছেড়ো না, ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবে। এছাড়া বাবা মা, শিক্ষকেরা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তার এই সফল হবার পেছনে।
আর যারা বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের সম্পর্কে বলেন, প্রচুর পড়াশোনার পাশাপাশি কষ্ট করতে হবে। মন প্রাণ দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে হবে। সিলেবাস ধরে রুটিন বানাতে হবে এবং রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিনের পড়াশোনা প্রতিদিন শেষ করতে হবে। যে বিষয়ে নিজেকে দুর্বল মনে হবে সেটা অল্প সময়ের জন্য হলেও প্রতিদিন রুটিনে রাখতে হবে।
রিভিশন খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির জন্য। বার বার রিভিশন দিতে হবে। ১-২ বার পড়লে অনেক সময় পড়া মনে থাকে না তাই বারবার রিভিশন দিতে হবে, এভাবে পড়লে মনে থাকবে। এছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও টিভির সংবাদ দেখতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে। পরীক্ষার আগে বাসায় বেশি বেশি মডেল টেস্ট পরীক্ষা ও রিভিশন বেশি দিতে হবে, তাহলে সময় কম নষ্ট হবে। রিটেনের আগে প্রচুর লেখার অনুশীলন করতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহ উপর ভরসা রাখতে হবে। তবেই সফলতা আসবে।