ওয়ার্ল্ড সায়েন্স কম্পিটিশনে দুই স্বর্ণপদক জয় করল বাংলাদেশ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ১১:১৩ AM , আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪, ১১:১৩ AM
ওয়ার্ল্ড সায়েন্স এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পিটিশনে টেকসই প্রযুক্তির রোবট উদ্ভাবনের মাধ্যমে একই ক্যাটেগরিতে দুটি স্বর্ণপদক জয় করল বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়ান ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিবছর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে সাতটি ক্যাটেগরি আছে। প্রযুক্তি ক্যাটেগরিতে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদকসহ একাধিক পুরস্কার জিতে নিয়েছে বাংলাদেশের টিম অ্যাটলাস ও কোড ব্ল্যাক। দেশের সফল রোবটিক দল টিম অ্যাটলাস এবং দেশের প্রথম নারী রোবটিক দল কোড ব্ল্যাক একই মঞ্চে উড়াল লাল-সবুজের পতাকা।
১২ থেকে ১৭ মে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্যানকাসিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এবারের প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণ করে ১৮টি দেশের ৩১১টি দল। তাদের মধ্যে টিম অ্যাটলাস জিতেছে স্বর্ণপদক, বেস্ট প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড ও সেমি-গ্রান্ড অ্যাওয়ার্ড। অন্যদিকে বাংলাদেশের একমাত্র নারী রোবটিক দল ‘কোড ব্ল্যাক’ স্বর্ণপদক ছাড়াও পেয়েছে মাইসো (মালয়েশিয়ান ইয়ং সায়েন্টিস্ট অর্গানাইজেশন) স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড।
স্বর্ণজয়ী কোড ব্ল্যাক দলে ছিলেন– ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস, বায়োটেকনোলজি বিভাগের নুসরাত জাহান সিনহা, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের তাহিয়া রহমান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের নুসরাত জাহান ও সনিয়া ইসলাম। টিম অ্যাটলাসের তৈরি রোবটটির নাম ছিল ‘ব্লু বট’, যা পানিতে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এ ছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণেও সক্ষম। রোবটটির বিষয়ে জানতে চাইলে টিম অ্যাটলাস দলের প্রধান সানি জুবায়ের বলেন, ‘প্রাথমিক পরীক্ষায় ব্লু বট উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। এর জিপিএস সেন্সর দূষণের উচ্চমাত্রা চিহ্নিত করতে পারে। এআইচালিত সিস্টেম রোবটকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার উপযোগী করে তোলে। এ ছাড়া রোবটটি জরুরি সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া ও উপকূলীয় এলাকার সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি শনাক্ত করতে সক্ষম।’
অ্যাটলাস দলের সদস্যরা সবাই শিক্ষার্থী। তারা হলেন– ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সানি জুবায়ের, ঢাকা কলেজের আবদুল্লাহ ইবনাহ হাসান, ঢাকার নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের মো. আল মাহমুদ, মারুফ মিয়া ও যশোরের দাউদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আতিক শাহারিয়ার।
প্রতিযোগিতায় প্রহরী নামের একটি উদ্ধারকারী রোবট উপস্থাপন করে কোড ব্ল্যাক। প্রহরী একটি উদ্ধারকারী রোবট, যা দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। অত্যাধুনিক ইমেজ প্রসেসিং এবং এআইর (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সাহায্যে এটি বাস্তব সময়ে ভিজ্যুয়াল ডেটা বিশ্লেষণ, বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও বিপজ্জনক অবস্থার মূল্যায়ন করতে পারে। এটি বৈরী পরিবেশে নির্ভুলভাবে চলাচল করতে পারে। রোবটটি জীবিতদের শনাক্ত করতে, বিপজ্জনক অবস্থার মূল্যায়ন করতে এবং দক্ষতার সঙ্গে বৈরী পরিবেশে চলাচলের জন্য বিভিন্ন সেন্সর ব্যবহার করে। এ ছাড়া এটি উদ্ধার অভিযানের সময় অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘নক্সী-কাঁথার মাঠ’ বই থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে রোবটটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশি রোবটিক্স দল টিম অ্যাটলাসের দলনেতা সানি জুবায়েরের হাত ধরে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কোড ব্ল্যাক। ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড রোবটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল টিম অ্যাটলাস। সানি জুবায়ের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নারী সদস্যদের নিয়ে যেতে আমি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কারণ সমাজ থেকে অনেক প্রশ্ন উঠত। তাই আমি একান্ত তাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা করলাম, যাতে তারা আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারেন।’ বর্তমানে সানি জুবায়ের কোড ব্ল্যাকের মেন্টর হিসেবে যুক্ত আছেন।
কোড ব্ল্যাকের উদ্দেশের কথা বলতে গিয়ে দলনেতা ফাবিন বলেন, ‘উদ্দেশ্য ছিল নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও নিবেদিত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যাতে তারা রোবটিক্স এবং স্টেমের (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়) অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুশীলন করতে পারেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘মেয়েরা প্রায়ই তাদের পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হয় এবং স্টেমের এসব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়। এসব প্রকল্পের জন্য সাধারণত রাতভর দলগত কাজের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মেয়েদের সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকতে দেওয়া হয় না। তাই আমরা মেয়েদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের কথা ভাবি।’ প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে কোড ব্ল্যাকের সদস্যরা তাদের প্রকল্পের বিষয়ে বিভিন্ন আইডিয়া ও রোবটের কনফিগারেশনের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন। এই পর্বে নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের জাকার্তায় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।