৫৪টি গবেষণা কেন্দ্র চললেও ব্যতিক্রম ৯টি, অর্থাভাবে গুটিয়ে নেয়া হলো কার্যক্রম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

দেশের সেরা বিদ্যাপিঠ নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে ৯টি গবেষণা কেন্দ্র। কর্তৃপক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হয়েছে। বর্তমানে ৫৪টি গবেষণা কেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে  কার্যক্রম চললেও গবেষণার দিক থেকে সন্তোষজনক অবস্থানে নেই ওই কেন্দ্রগুলোও।

আর্থিক অনুদান না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া গবেষণা কেন্দ্রগুলো হলো- সেন্টার ফর ব্যাংকিং অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এসএমই ম্যানেজমেন্ট, সেন্টার ফর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসোর্স ইন স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অন বিজনেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আরবরি কালচার সেন্টার, কটলার সেন্টার ফর মার্কেটিং এক্সিলেন্স, সেন্টার ফর মাইক্রোফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সেন্টার ফর করপোরেট গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স স্টাডিজ, বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ।

কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মকর্তার বলছেন, সাধারণত বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা ও বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা পায় এসব গবেষণা কেন্দ্র। পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নেই কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার রীতি রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বর্তমানে ৫৪টি গবেষণা কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়টি গবেষণা কেন্দ্রে। অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে নয়টি বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠিত এসব গবেষণা কেন্দ্রের কার্যক্রম এখন নেই বললেই চলে।

অর্থাভাবে গবেষণা কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন বলেন, এ গবেষণা কেন্দ্রগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে খোলা হয়েছে ঠিকই; কিন্তু বাজেটের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় বরাদ্দ পায় না। গবেষণা কেন্দ্রগুলো বিভাগের উদ্যোগে খোলা হয়েছে এবং তারাই পরিচালনা করছে। এ কেন্দ্রগুলোর জন্য অফিস ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বরাদ্দ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলো অর্থ বরাদ্দ পেতে আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি বিবেচনা করবে।

‘সেন্টার ফর ব্যাংকিং অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এসএমই ম্যানেজমেন্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দীন বলেন, ‘মৌলিক গবেষণার লক্ষ্যেই এ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমি অবসরে আসার পর বিভাগের চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রটি পরিচালনার কথা ছিল। যদিও যতদূর জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক অনুদান না পাওয়ায় কেন্দ্রের কার্যক্রম এখন বন্ধ।

অর্থের অভাবে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া আরেকটি গবেষণা কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর মাইক্রোফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন প্রকাশনায় কেন্দ্রটির নাম উল্লেখের বাইরে দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্ব নেই এ গবেষণা কেন্দ্রের।

এসব কেন্দ্রে অর্থ বরাদ্দ না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অর্থ বরাদ্দ পেতে হলে এর জন্য এফসি (ফাইন্যান্স কমিটি) ও সিন্ডিকেট সভা থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এরপর উপাচার্যের অনুমোদনের পর গবেষণা কেন্দ্রকে বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করতে কোষাধ্যক্ষের দপ্তরে পাঠানো হয়। সে আলোকে প্রতি অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র নির্দিষ্ট পরিমাণ তহবিল বরাদ্দ পায়।

এদিকে গবেষণার দিক থেকে সন্তোষজনক অবস্থানে নেই অর্থ বরাদ্দ পাওয়া কেন্দ্রগুলোও। জানা গেছে, এসব কেন্দ্রে প্রতি অর্থবছরে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ কেন্দ্রই প্রত্যাশা অনুযায়ী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। ‘বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ’ চলতি অর্থবছরে সেন্টারে মাত্র ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কয়েক মাস আগে বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ওপর একটা সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল এ কেন্দ্র যদিও বরাদ্দকৃত তহবিল পর্যাপ্ত না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে সেমিনারটি বাতিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রটি।

গবেষণা কেন্দ্রগুলোর দুরবস্থা ও বরাদ্দকৃত বাজেটের অপর্যাপ্ততা বিষয়ে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে প্রয়োজনের তুলনায় নামমাত্র একটা অর্থ বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গবেষণা তো দূরে থাক, বরাদ্দকৃত অর্থ সভা-সেমিনারের            চা-নাশতার বিল পরিশোধেই ফুরিয়ে যায়। অর্থের ঘাটতির কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে পারছেন না। অর্থ সংস্থান না করে বছর বছর গবেষণা কেন্দ্র খোলার কোনো ফায়দা আছে কি?

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বছর প্রতি গবেষণা ব্যয় কয়েক কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল গবেষণা খাতে। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ