জাবি বাসে জুনিয়রকে মেরে ফেলার হুমকি, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

জাবি বাসে জুনিয়রকে মেরে ফেলার হুমকি, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
জাবি বাসে জুনিয়রকে মেরে ফেলার হুমকি, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

বাসে সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়র শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী এরফানুল ইসলাম ইফতুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মারধরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক।

এসময় তিনি বলেন, ‘বাসে আমি ও সংগ্রাম একসাথে বসে ছিলাম। ড্রাইভার হঠাৎ ব্রেক করায় ব্যাথা পাওয়ায় বাস চালকের সাথে সংগ্রামের বাকবিতন্ডা হয়। এসময় বাসে থাকা সিনিয়র তার কাছে পরিচয় চাইলে সে পরিচয় না দিলে তারা তাকে কলার ধরে বাস থেকে নামিয়ে পাঁচ-ছয় জন মিলে মারধর করে।’

সঞ্চালক ইফতু বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। বারবার কোন না কোন কারণবশত হয়ে থাকে। এই ধরনের ঘটনা হলের গণরুম থেকে শুরু করে এখন ঢাকার রাস্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেও হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এসব শিক্ষার্থীরূপী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে ছাত্রত্ব বাতিল ও তাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার তীব্র দাবি জানাচ্ছি। এদের সাথে ক্যাম্পাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর এই সংগ্রামকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।’

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ ব্যাচের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুজিবুর রহমান শিশির বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে চলাচলের জন্য ক্যাম্পাসের বাসগুলো দেয়া হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হলে তার দায়ভার কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায়। কিন্তু সেই বাসে ক্যাম্পাসের এক গ্রুপ শিক্ষার্থী সংগ্রামকে আহত করেছে। বাসের চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে সংগ্রাম নির্দোষ ছিল। অতি উৎসাহিত হয়ে নিজের সিনিয়র ভাব প্রকাশ করার জন্য একজন সংগ্রামকে মারতে আসে। তার সাথে আরও কয়েকজন যুক্ত হয়। এসময় তারা তাকে ভোতা অস্ত্র দিয়ে আহত করে যা ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত।’

শিশির আরও বলেন, ‘এই ধরনের আঘাতকারীরা সন্ত্রাসী। এরা যেকোন কমিউনিটির জন্য হুমকিসরূপ। সবচেয়ে অবাক লেগেছে এক বাস শিক্ষার্থীর সামনে তাকে মারধর করা হয়েছে। তারা কোন প্রতিবাদই করেননি। বাসের সেই যাত্রীরা কি চুড়ি পরে বসে ছিল! তারা পাঁচ-ছয় জন মিলে সংগ্রামকে স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে মারধর করেছে। বাসের সেই নির্জীব মানুষগুলোর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি যারা একটুও প্রতিবাদ করেননি। সেই সাথে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ক্যাম্পাস থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হোক।’

বাসে হামলায় আহত শিক্ষার্থী সংগ্রাম ইসলাম বলেন, ‘কিছু বলার ভাষা আমার নেই। আমাকে তারা নৃশংসভাবে মেরে আহত করেছে। আমার চিকিৎসা এখনও চলছে। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি যারা আমাকে মেরে আহত করেছে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক।’

আরও পড়ুন: দশ বছরে ১১ জাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

এর আগে মারধরের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সংগ্রাম। অভিযোগপত্রে সংগ্রাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার বঙ্গবাজার থেকে একতলা বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলাম, টেকনিক্যালের কাছাকাছি বাস আচমকা ব্রেক করলে আমি ভারসাম্য হারিয়ে কাঁধে ও বুকে আঘাত পাই এবং এক বড় ভাইয়ের উপরে পড়ি।

পরে এভাবে ব্রেক কেন করলেন, ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আদনান শাকিল উগ্রভাবে বলেন 'হাত ছিল না তোর। আমি তাকে বলি, দুপুরে খাওয়া হয়নি, আর দুটো ব্যাগের জন্য ব্যালেন্স রাখতে পারিনি। আমার কথা শেষ না হতেই তিনি আমাকে ব্যাচ কত, জিজ্ঞেস করেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুই-তিনজন এসে যুক্ত হন।

অভিযোগে শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘পরিচয় ও ব্যাচ জানার পর সিনিয়র শিক্ষার্থীরা আমাকে গালি দিয়ে বাস থেকে নেমে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে বাস থামিয়ে আমাকে জোরপূর্বক নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় আমার মাথায় জোরে জোরে ঘুষি ও থাপ্পড় মারা শুরু করেন তারা। পরে স্ট্যাম্প দিয়ে আমার আমার পায়ে পেটানো হয়, এতে স্ট্যাম্পটি ভেঙে যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু হামলাকারীদের ওই শিক্ষার্থী চিনতে পারেননি। এ জন্য তদন্ত করতে একটু সময় নিচ্ছি। সুষ্ঠু বিচারের জন্য যা যা করার প্রয়োজন আমরা সবটুকু করবো।’

অভিযোগের বিষয়ে আদনান শাকিলের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ