দশ বছরে ১১ জাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত দশ বছরে ১১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। যার মধ্যে ৬ জন ছাত্রী ও ৫ জন ছাত্র। বৃহস্পতিবার রাতে জাবি শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্রের ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও করণীয়’ শীর্ষক কাউন্সেলিং প্রোগ্রামে এ তথ্য উপস্থাপন করেন মনোবিজ্ঞানী ইফরাত জাহান।

আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের ৩ জন, ইংরেজি, ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন এবং বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের একটি জটিল সমস্যা। পড়াশোনার চাপ, বেকার সমস্যা, বৈবাহিক সমস্যা, মানসিক নির্যাতন, পারিবারিক সমস্যা, অবসাদ ও বিষন্নতাই এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।’

ইফরাত জাহান বলেন, ‘মহামারিতে ১৮ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মানসিক সমস্যা। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য।’

অনুষ্ঠানে ‘মহামারীতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য’ শিরোনামে একটি জরিপ উপস্থাপন করা হয়।

জরিপের জাতীয় অংশে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সারাদেশে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। যেখানে ২০১৮ সালে এ সংখ্যাটি ১১ জনে সীমাবদ্ধ ছিলো। এছাড়া ২০১৭ সালে ১৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

জরিপে বলা হয়, মহামারিতে আত্মহননকারী ১৫১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী, ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী ও ৯ জন মাদ্রাসার ছাত্র।

জরিপ প্রকাশের সময় ইফরাত জাহান বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরে ১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জন অবিবাহিত, ৪ জন বিবাহিত ও একজন তালাক প্রাপ্ত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রথম বর্ষের ১জন, তৃতীয় বর্ষের ২ জন, চতুর্থ বর্ষে ১জন, স্নাতকোত্তরের ৩জন এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ৩ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘তিন জন ক্যাম্পাসে, ২ জন স্বামীর বাসায়, ৩ জন মেসে এবং ৩ জন বাড়ির বাইরে আত্মহত্যা করেন। যার মধ্যে ৭ জন গলায় ফাস দিয়ে, ২ জন উচুস্থান থেকে লাফিয়ে, ১ জন বিষক্রিয়ায় এবং ১ জন পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করেন।’

জরিপে এসব আত্মহত্যার ১১টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে প্রেম ঘটিত সম্পর্কে ব্যর্থ হয়ে ৩ জন, বৈবাহিক সমস্যার কারণে ৩ জন, একাডেমিক চাপে ২ জন, বেকারত্বের অভিশাপে ২ জন ও একজন মানসিক যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য কাজের মাধ্যমে প্রত্যাশা বৃদ্ধি (ক্রিয়েটিং হোপ থ্রো একশন)।
জরিপে আত্মহত্যা প্রতিরোধে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়।

এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগ এবং আবাসিক হলগুলোতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাদার সাইকোলজিস্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগ এবং প্রতিটি আবাসিক হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা।

জরিপের বিষয়ে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্র এর সহকারী পরিচালক (মনোবিজ্ঞানী) ইফরাত জাহান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রতি বছর ৭ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে ৭৭% ঘটনা মধ্যম আয়ের দেশে সংগঠিত হয়। বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম। আবার দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। মহামারিতে এ প্রবণতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা নিয়ে এখনই সচেতনতার উপযুক্ত সময়।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence