৫০-এ ৩৩.৫ নম্বর পেলেন প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আজীবন বহিষ্কার হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভারনারেবিলিটি স্টাডিজ ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী জিএম রাফসান কবির। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রশ্নফাঁসের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাফসান ২০১৯ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছেন। তবে সম্প্রতি একটি কোর্সের ইনকোর্স পরীক্ষায় তার নম্বর প্রকাশিত হয়েছে। এতে ৫০ নম্বরের মূল্যায়নে তিনি ৩৩.৫ পেয়েছেন।

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের রাফসানসহ ৬৩ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। পরে একই বছর ০৫ ফেব্রুয়ারি বহিষ্কৃত ৬৩ শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, বহিষ্কৃতদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও হলে জানানো হয়েছে। তালিকা প্রকাশের পর থেকে তারা আর আমাদের ছাত্র নয়।

তবে বহিষ্কৃত রাফসান একদিকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী, সেই সাথে কোনো পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও নম্বর পাওয়ায় অনেকটা অবাক হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করে নিজের মনগড়া নম্বর প্রদান করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক বিভূতি ভূষণ শিকদার বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করেছেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: ঢাবি থেকে ৬৩ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত

জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ডিএমসি-৪০৯’ শীর্ষক কোর্সের ইনকোর্স পরীক্ষাসমূহের ফলাফল প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, সাধারণত কোনো কোর্সের ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫০ নম্বর কোর্স চলাকালীন ক্লাসে উপস্থিতি, ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট বা টার্ম পেপার ও মিডটার্ম পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। এককভাবে এসব মূল্যায়ন করেন কোর্স শিক্ষক। অবশিষ্ট ৫০ নম্বরের সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হয়।

ইন্সটিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৯ সালের শেষ দিকে সমাপনী পরীক্ষার পর থেকে রাফসান কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘ডিএমসি-৪০৯’ কোর্সের ফলাফলে ৫০ নম্বরের মধ্যে বিভূতি ভূষণ শিকদার তাকে ৩৩.৫ নম্বর দিয়েছেন। এর মধ্যে উপস্থিতিতে ৫ এর মধ্যে ৪, ক্লাস টেস্টে ১০ এর মধ্যে ৬.৫, টার্ম পেপারে ১৫ এর মধ্যে ১০ এবং মিডটার্ম পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১৩ নম্বর পেয়েছেন। যদিও রাফসান এসবের একটিতেও অংশ নেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিজের মন মতো নম্বর প্রদান করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে নম্বর প্রদান করলে এমন ভুল হওয়া অসম্ভব। তবে, অভিযোগের বিষয়ে বিভূতি ভূষণ শিকদারের ব্যবহৃত দু’টো মুঠোফোন নম্বরে কল করে ও ই-মেইলে মেসেজ পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে নম্বর প্রদানের বিষয়টি নজর আসলে বিভূতি ভূষণ শিকদার নম্বর শিট সংশোধন করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. দিলারা জাহিদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা বিষয়টি আমাকে অবগত করলে আমি ওই শিক্ষককে জানিয়েছি। তিনি পরে সংশোধন করে দিয়েছেন। সুতরাং, আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। কোভিডের কারণে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ