ঢাবিতে কুকুর আতঙ্ক, একদিনে আহত অন্তত ৫

কুকরের কামড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও পথচারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে
কুকরের কামড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও পথচারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে  © টিডিসি ফটো

কুকরের উৎপাত বেড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। সাম্প্রতিক সময়ে কুকরের কামড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও পথচারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এতদিন ক্যাম্পাসে এসব কুকুর নির্বিঘ্নে দলবেঁধে ঘুরে বেড়িয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় খোলাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এসব কুকুড়ের কামড়ে আহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যার ফলে কুকুর আতঙ্কে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে ভয় পাচ্ছে।

রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তত ৫ জনকে কুকুরে কামড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে তিন জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দুইজন পথচারী। এছাড়া, কয়েকদিন আগে মধুর ক্যান্টিনে একজনকে কুকুর কামড় দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কয়েকদিন আগে একজন বিক্ষুককে কুকুরে কামড় দিয়েছে। আহতদের মহাখালী সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মোতাহার হোসেন বলেন, আমি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে যাওয়ার সময় প্রক্টর অফিসের সামনে আমাকে কুকুড়ে কামড় দেয়। তখন, একাধিক শিক্ষার্থী বলতে থাকে যে কিছুক্ষণ আগেও এখানে দুইজনকে কুকুরে কামড় দিয়েছে। আমি তখন আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে গিয়ে একজন পথচারীকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পাই। তিনি জানান তাকেও কুকুরে কামড় দিয়েছে। একইদিন আরও একজনকে কুকুরে কামড় দিয়েছে বলেও ওই পথচারী জানান।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বাহাউদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে মুহসীন হলের সামনে একটি বাচ্চা ছেলেকে কুকুর দৌড়ানি দিয়েছিলো। তখন, আমরা সবাই দৌড়ে গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করি। না হলে ওই দিন ওই ছেলের জীবনও যেতে পারতো।

তিনি আরও বলেন, কুকুরের উৎপাত ক্যাম্পাসে সবার মুখে মুখে। যাদের দায়িত্ব এগুলো দেখভাল করা তারা যদি না দেখে তাহলে তো সমস্যা।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য বলেন, সরকারের আইনের কারণে কুকুর নিধন আগের মতো আর নেই। দীর্ঘদিন পর ক্যাস্পাসে শিক্ষার্থীরা আসছে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় কুকুরের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কুকুরগুলো শুধু আক্রমণ করে না বিভিন্ন ধরনের হয়রানিও করেন। বিশেষ করে আমার শিক্ষার্থী বোনেরা বেশি কুকুরের হয়নারির শিকার হচ্ছে। আজকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেই ইতিমধ্যে পাঁচজকে কুকুর কামড় দিয়েছে। আমরা অবশ্যই কুকুর মুক্ত ক্যাম্পাস চাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন,  আমাদের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক। সকালে আমরা জানার পরে তাৎক্ষণিকভাবে কুকুরগুলোকে সরিয়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, বেওয়ারিশ কুকুর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত  সিটি কর্পোরেশনের। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে আবার অনুরোধ করবো। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু খুলতে যাচ্ছে, কোভিড সিচুয়েশনের আগে আমাদের প্রক্রিয়ায় যেমনটি ছিল সে অবস্থায় আমাদের থাকতে হবে। একবার কামড় দিলে কুকুর যে আরেকবার কামড় দিবে না তারতো কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তিনি আরও বলেন, কিছু পশুপ্রেমি আছে, তাদেরও সহযোগিতা লাগবে। আমরা হিউমিন রাইটস বা প্রাণীদের পক্ষে। কিন্তু প্রাণীর অবস্থান যখন মানুষের জন্য ক্ষতিকারক এবং হুমকির সম্মুখীন হবে তখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত এগুলোকে ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেওয়া বা যেভাবে সরানো প্রয়োজন আমরা সরিয়ে ফেলবো।


সর্বশেষ সংবাদ