‘পেট তো বোঝেনা করোনা কী জিনিস’- ভ্যান নিয়ে রাস্তায় রাবির মোশারুল

 মোশারুল ইসলাম
মোশারুল ইসলাম  © টিডিসি ছবি

করোনা টালমাটাল পরিস্থিতি হঠাৎ বিশ্বকে যেমন পরিবর্তন করেছে, তেমনি পরিবর্তন করেছে জনজীবনের স্বাভাবিক ছন্দপথ। ক্লান্তি, হতাশা ও বিষন্নতায় নাজেহাল আজ মানুষ। ফলে নিজের প্রশান্তির পাশাপাশি নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষদের প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে টিকে থাকার লড়াই!

করোনার এই দীর্ঘ ছুটিতে তেমনি এক জীবন সংগ্রামে নামতে হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মোশারুল ইসলামকে। নিম্নবিত্ত পরিবারের হাল ধরতে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তিনি। করছেন কৃষি কাজও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি রাবি অ্যাথলেটিক দলের তারকা খেলোয়াড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঁচবার স্বর্ণপদকসহ জিতেছেন ১০টি রোপ্য। রাবিকে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় বানিয়েছে চ্যাম্পিয়ন। প্রতিযোগিতার মাঠে তার এই দাপটে লড়াই মুগ্ধ করেছে সবাইকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোশারুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র। গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামে।

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবা ফেরিওয়ালা বাবা ও গৃহিণী মায়ের দ্বিতীয় সন্তান মোশারুলের রয়েছে আরো এক ভাই ও বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাইও বিবাহিত, করেন কৃষিকাজ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় মাধ্যমিকের পর থেকে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে হয়েছে মোশারুলকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি ও টিউশনির টাকায় চলত পড়ালেখা। তবে করোনার কারণে সেসব উপার্জনের রাস্তাও হারিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে বাবার ফেরি কাজের ভ্যানটি নিজে চালিয়ে পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি।

এর আগে, গত শুক্রবার মোশারুল ইসলাম তার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন- পড়ালেখা করলে তো করোনা ধরে, যার জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই পেটের দায়ে ভ্যান চালানো শুরু করেছি। পেট তো বোঝে না করোনা কী জিনিস।

তার এই স্ট্যাটাসের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলো শুরু হয় বেশ আলোচনা। অনেকে তার পোস্টটি শেয়ার করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশারুল ইসলাম জানান, ক্যাম্পাস খোলা থাকাবস্থায় রাজশাহীতে টিউশনির পাশাপাশি টুকটাক কিছু কাজ করে যা পেতাম, সেটা দিয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিতাম। তাছাড়া খেলাধুলা করেও বিভিন্ন সময়ে কিছু টাকা আয় হতো। কিন্তু করোনায় এসব কিছু বন্ধ। দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে দরিদ্র পরিবারের কষ্ট দেখতে না পেরে বাবার ফেরির ভ্যানটি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। পাশাপাশি কৃষিকাজও করছি।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী থাকতে বেশ কয়েকটি শোরুমে পার্টটাইম চাকরির জন্য যোগাযোগ করেছি, কিন্তু পাইনি। দু'এক জায়গায় চাকরি দিতে আগ্রহ দেখালেও কেউই তিন-চার হাজারের বেশি বেতন দিতে রাজি হয়নি। সে জন্য রাজশাহী থাকা সম্ভব হয়নি। কেননা যা উপার্জন করব তা দিয়ে রাজশাহীতে টিকে থাকা হলেও পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারব না৷

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, মোশারুল ইসলাম আমাদের বিভাগের গর্ব। তার পাশে আমরা রয়েছি। এ ব্যাপারে বিভাগ এবং অ্যালামনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত ভাল কিছু হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম জানান, মোশারুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। আমি তার বিষয়ে জেনেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। শিক্ষার্থীদের এমন বিপদে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা তাদের পাশে থাকবে বলেও জানান উপাচার্য।