সংগ্রামী উদ্যোক্তা রাবি শিক্ষার্থী জুয়েল মামুনের দিন বদলের গল্পে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন ও তার সহযোগী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন ও তার সহযোগী  © ফাইল ছবি

সাধারণ মানুষের উদ্যোক্তা হয়ে উঠার বাঁকে বাঁকে থাকে ছোট-বড় অনেক গল্প। যে গল্প প্রবল আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, সীমাহীন ধৈর্য্য ও সাহসীকতার চাদরে থাকে মোড়ানো। জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় এ গল্পের নবযাত্রা। জীবন চলার পথে যেমন আসে নানা বাঁধা, তেমনি আসে ঝুঁকিও। কিন্তু তার মানেই তো থেমে যাওয়া নয়। কেবল আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই ফের উঠে দাড়াতে হয়। কেননা, সাফল্য তাদের কাছেই ধরা দেয়, যারা থেমে গিয়েও পথের শেষ দেখতে এগিয়ে যায়।

ঠিক তেমনই এক সংগ্রামী উদ্যোক্তার নাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন। শীতে খেজুর গুড়, গ্রীষ্মকালে আম, কখনো মধু, তো কখনো গাভী পালনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ এই শিক্ষার্থী। নিম্নবিত্ত পরিবার ও অর্থনৈতিক নানা সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে তৈরী হয় ধোঁয়াশা। কিন্তু সমস্যায় লক্ষ্যচূত্য না হয়ে দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছেন জুয়েল মামুন।

২০১৮ সালে সেই স্বপ্নকে লালন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে ফরমালিন মুক্ত আম সরবরাহের মাধ্যমে শুরু করেন তার ব্যবসায়িক অগ্রযাত্রা। ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে গড়ে তুলেন অনলাইন প্লাটফর্ম 'ফ্রুটস হান্ট'। প্রথমবারেই দেশজুড়ে বেশ সাড়া ফেলে তার এই উদ্যোগ। ফলে আমের মৌসুমে নব উদ্যোমে শুরু হয় তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম। ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বাগান ক্রয়ের পাশাপাশি গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে কুরিয়ারে পৌঁছে দেন তাদের নিজ গন্তব্যে। ফলে সে মৌসুমে বিক্রি হয় প্রায় পাঁচ হাজার কেজি আম।

ভেজালমুক্ত পণ্যের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধির ফলে পরের বছর প্রায় ১৫ হাজার কেজি আম সরবরাহ করতে সক্ষম হন তিনি। গতবছর ক্রেতাদের চাহিদার উপর নির্ভর করে নিয়ম করেন, সবার আগে ভাল মানের আম পেতে টাকা পাঠিয়ে বুকিং দিতে হবে। তাতেও বেশ সাড়া মিলে। সেবারও বিক্রি হলো প্রায় ৩০ হাজার কেজি আম।

সেই ধারাবাহিকতায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের কাছে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহীর আম পৌঁছে দিতে পুরোদমে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ উদ্যোক্তা জুয়েল মামুন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে জুয়েল মামুন বলেন, ক্রেতাদের চাহিদার উপর নির্ভর করে এবারও আমরা তাদের সামনে হাজির হয়েছি। আগের তুলনায় ক্রেতাদের কাছ থেকে অনেক বেশি সাড়াও পাচ্ছি। ফলে মৌসুমের শুরুতেই চার হাজার কেজি গোপালভোগ আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত হিমসাগর পাঠিয়েছি প্রায় চার হাজার কেজির উপরে। সরবরাহকৃত আমের গুণগতমান ও সার্ভিস সম্পর্কে ক্রেতাদের খুবই ভাল ফিডব্যাক আসছে বলেও জানান তিনি।

এবছর আম বিক্রির টার্গেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, এবছর আমাদের টার্গেট প্রায় ৫০ হাজার কেজি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা সেটা সম্পূর্ণ করতে পারার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এই উদ্যোগের ফলে পরিবার কতটা সাপোর্ট পাচ্ছে জানতে চাইলে জুয়েল মামুন বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমের ব্যবসা করে আমরা সংসারের হাল ধরতে পেরেছি। ব্যবসার আয় থেকে বাড়িতে গরুর খামার করেছি। খামারে এখন দুটি ষাঁড় আছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল মামুনকে সঙ্গে পরিবারের হাল ধরতে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলমগীর।

রাজশাহীস্থ পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের বাজারে দুই ভাইসহ আরও পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে এবছর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কর্মীদের একজন শুধু আমের মান নিশ্চিত করেন। অন্যরা আম ওজন করা, প্যাকেট করা, কুরিয়ারে বা গাড়িতে পাঠানোর কাজ করেন।দু'ভাইয়ের এই কর্মপ্রচেষ্টার ফলে গত চার মাস ধরে তাদের বয়স্ক বাবাকে আর বাইরে কাজ করতে হচ্ছে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence