অনলাইন পরীক্ষা চান না ঢাবি শিক্ষার্থীদের একাংশ

ঢাবি
ঢাবি  © লোগো

করোনা মহামারির কারণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সাথে আটকে আছে ঢাবির অধিকাংশ বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। এদিকে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এপ্রিল থেকে মে তে মৃত্যুর হার কম হলেও টিকা নিশ্চিত না করে পরীক্ষার আয়োজন করতে রাজি নয় ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায়  বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার (৫ মে) ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু ঢাবিতে অনলাইন ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এ বিষয়ে মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘করোনার কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশনজট তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব কমাতে ডিনস কমিটির জরুরি বৈঠকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যে যদি সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তাহলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টায় নেওয়া হবে।’

এদিকে ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ফেসবুক পেইজে পোলিং ভোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তে অনাস্থা প্রকাশ করেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

অনার্স শেষ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা অনলাইন বা যেকোনো ধরনের পরীক্ষার পক্ষে হলেও সকল বর্ষের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পরীক্ষার পক্ষে নন। অনলাইন ভর্তি পরীক্ষায় মেধা যাচাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

ঢাবির অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাত বলেন, ‘আমরা যারা শেষ বর্ষে আছি, আমাদের কিন্তু পরীক্ষা নিলেই আমরা মোটামুটি চাকরির দিকে যেতে পারব। আমাদের বিভাগে ৮ম সেমিস্টারে মোটামুটি ২০ দিনের রুটিনেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। এই পরীক্ষা স্যারদের যেভাবে ইচ্ছা নিক, কিন্তু নিতে হবে। আমরা যারা শেষ বর্ষে আছি তাদের জন্য পরীক্ষা হওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. ইউনুস বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলে অবশ্যই নেওয়া উচিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের একাডেমিক কার্যক্রম থামিয়ে রাখেনি, তাদের পরীক্ষা চলমান রয়েছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এক দিন করে লস হলেও হাজার হাজার দিন লস। এক বছরের বেশি সময় অলরেডি নষ্ট হয়ে গেছে। এবার বিষয়টি বিবেচনায় আনার সময় হয়েছে।’

অন্যদিকে, অনলাইন পরীক্ষার বিরোধিতাও করছেন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা গ্রামে অবস্থান করার কারণে অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ফলে একটি দীর্ঘ বৈষম্যের সৃষ্টি হতে পারে, অনেকেই ঝরে পড়তে পারেন। 

ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যেখানে চার ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থী নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করেননি নেটওয়ার্ক কভারেজ ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে। সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়। কেউ অনেক চেষ্টা করেও কানেক্ট হতে পারে না। কিংবা আরেকজনের পরীক্ষা চলাকালীন ওয়াইফাই ডাউন অথবা কারেন্ট চলে যায়। জোড়াতালির নেটওয়ার্কে কোনোরকমে ক্লাস করা গেলেও অনলাইন পরীক্ষা কীভাবে সম্ভব? সশরীরে যদি একান্তই পরীক্ষা না নেওয়া যায়, তবে সেটা হোক অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জয় পাল বলেন, ‘অনলাইনে কো‌নো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। যেখানে ক্লাসই করতে পারি না, সেখানে আবার পরীক্ষা! যা হবে সরাসরি হবে। পরীক্ষা নিতে চাইলে সরাসরি নিতে হবে। ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে তারপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে নতুন করে ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা হবে। এর আগে না।’


সর্বশেষ সংবাদ