দুর্নীতির অভিযোগ
রাবি ভিসি-প্রোভিসিসহ সব প্রশাসনিক কর্মকর্তার অপসারণ দাবি
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ মে ২০২১, ০৭:৩১ PM , আপডেট: ০২ মে ২০২১, ০৮:১৫ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়াসহ সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকা ও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলে এই দাবি তোলেন শিক্ষকেরা। আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এই দাবি তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদের শেষপ্রান্তে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের আওতায় নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ৫০ বিঘা জমি লিজ দিয়ে তিনটি পুকুর খনন প্রকল্পের কাজ চলছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্প ইউনিট কোনরূপ সম্ভাবতা যাচাই এবং বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা না করে এই প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শিক্ষকেরা আরো বলেন, গত ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কৃষি প্রকল্পের ১১৯তম সভায় এবং ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে পুকুর খননের প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর ১৭টি শর্ত দিয়ে পুকুর খনন প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের ১৩ নম্বর শর্তে “পুকুরের পাড় বাঁধাই-এর পর অতিরিক্ত মাটি সর্বোচ্চ ৩০০ গজ দুরে ফেলে রাখতে হবে এবং উক্ত মাটি কৃষি প্রকল্পের আওতায় থাকবে” এবং ১৭ নম্বর শর্তে “যে কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে কোটেশনদাতার কোটেশন বাতিল করে জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এই শর্ত ভঙ্গ করে গত ২৭ মার্চ থেকে খননরত পুকুরের মাটি ট্রাকে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন ইট ভাটায়, ব্যক্তিগত পুকুর ও গোরস্থান ভরাটসহ বিভিন্ন কাজে প্রতি ট্রাক মাটি পাঁচ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুটিকে নিয়মানুযায়ী নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াই নজিরবিহীনভাবে পুকুর খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ও স্বার্থপরিপন্থী এবং দায়িত্বে চরম অবহেলার সামিল।
রাবি শিক্ষকেরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ও স্বার্থ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন এ দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বরং আমরা আশঙ্কা করছি যে, চুক্তির শর্ত ভেঙে ইজারাদাররা পুকুর কাটার যে মাটি বিক্রি করছে তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সরাসরি যোগসাজস রয়েছে। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ চুরি বা লুট হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। মাটি চুরি বা লুট হওয়া বন্ধ করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা যেসব প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো কালক্ষেপণ করার শামিল। এসব পদক্ষেপ মাটি চুরি বা লুট হওয়া ঠেকাতে পারেনি বরং মাটি লুটপাটের পথ আরও বেশি সুগম করেছে। এক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী কাজ হলে ও মাটি লুটের প্রথম দিনই প্রশাসন আইনি ব্যবস্থা নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষা করা যেত। এ ছাড়াও মাটি কাটা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দুই উপ-উপাচার্যের পরস্পরবিরোধী ও দায়িত্বহীন বক্তব্য এবং উপাচার্য তথা প্রশাসনের কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে হতাশ করেছে।
দুর্নীতি বিরোধী রাবি শিক্ষকরা আরো বলেন, রাতের আঁধারে মাটি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ২৬ এপ্রিল রাতে দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে মাটি পরিবহন কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। এই মৃত্যুর দায় কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টা কমিটি, ইজারা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়িয়ে যেতে পারে না। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এই মৃত্যু ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি লুটপাটের সাথে কোনো প্রকার পরোক্ষ সম্পৃক্ততার কারণেই হয়তো প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি বা মাটি লুটপাট বন্ধ করতে পারেনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের সংশ্লিষ্টতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ চুরি বা লুটের এমন ঘটনা ঘটেনি। পুকুর কাটা ও মাটি বিক্রির সাম্প্রতিক বিষয়টিকে সরকারি তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দুর্নীতির অংশ বলেই আমরা মনে করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি হিসেবে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা ও কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টা কমিটি এই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। অপর উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রক্টর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমানও এই বিষয়ে তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করেন নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় ও ইজারা বাতিল না করায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ-স্বার্থ রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের অপসারণের জোর দাবি করছি। একই সাথে বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় ও জনগণের সম্পদ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।