দায়িত্ব পেয়েই বিতর্কে রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহবায়ক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বিবৃতি দিয়েছেন দলটির ১৬ জন সদস্য। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে সহকর্মীদের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব বিষয় তুলে ধরেন দলটির সদস্যরা।

এসময় স্টিয়ারিং কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. এম হাবিবুর রহমানের কর্মকাণ্ডকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবােধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকারের সাথে প্রতারণার শামিল হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তারা।

বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত দলীয় স্টিয়ারিং কমিটির তিনটি সভা (দুইটি নিয়মিত ও একটি জরুরি) অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৪ ফ্রেরুয়ারি স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রথম সভা অনুষ্ঠানের জন্য ১১ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। দলীয় নির্বাচিত কনভেনারকে আমরা বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে তিনি গড়িমসি করেছেন।’

তারা বলেন, ‘গত ১১ মার্চ দলীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সাক্ষাতের দিন ও সময় নির্ধারণের দায়িত্ব নেন দলীয় আহবায়ক। এক্ষেত্রেও তিনি কালক্ষেপণ করার অযৌক্তিক ও অহেতুক পন্থা অবলম্বন করেন।’

তারা অভিযোগ করেছেন, দলীয় রীতি উপেক্ষা করে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে রীতি অনুযায়ী উপাচার্য মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক এই দলকে আমন্ত্রণ জানানাের সৌজন্য দেখাননি। তবুও আহবায়ক ব্যক্তিগতভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে দলকে অপমানিত করেছেন। অথচ তিনি ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপাচার্যের সাথে স্টিয়ারিং কমিটির সাক্ষাতের দিন ও সময় নির্ধারণের চেষ্টা করেননি।’

তারা আরো বলেন, বারবার তাকে তাগিদ দিলেও এ বিষয়ে তিনি কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এ বিষয়টিসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে সংঘটিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভা আহবানের অনুরােধ জানালেও তিনি সেখানেও নিষ্ক্রিয় থাকেন। অথচ শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সাধারণ সম্পাদকের পত্র নিয়ে গত ২১ মার্চ তিনি স্টিয়ারিং কমিটির জরুরি সভা আহবান করেন।

একপর্যায়ে তাদের চাপের মুখে গত ২৪ মার্চ তিনি স্টিয়ারিং কমিটির সভা আহবান করেন জানিয়ে শিক্ষকরা বলেন, এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপাচার্যের নিকট জোর দাবি জানানাের সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্তগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলােকে শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারি নিয়ােগ নীতিমালা সংশােধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা; ফলিত গণিত বিভাগে আবেদনের যােগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিধিবহির্ভূতভাবে অ্যাডহক শিক্ষক নিয়ােগ বাতিল করা; ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া সব ধরনের নিয়ােগ বন্ধ সংক্রান্ত নির্দেশনা উপেক্ষা করে ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৫০৩তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সকল নিয়ােগ ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেজ এবং ইনস্টিটিউট অব বায়ােলজিক্যাল সায়েন্সেস) বাতিল করা; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নিয়ােগ কার্যক্রম বন্ধ রাখা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মােতাবেক রেজিস্ট্রারকে অপসারণ না করে তাকে পদত্যাগের সুযােগ সৃষ্টি করে দেয়ার ব্যাপারে প্রতিবাদ করা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার ও দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে হেফাজতে ইসলাম যে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে সে বিষয়ে দলীয় অবস্থান নির্ধারণ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে দলীয় সদস্যদের নিয়ােগ প্রদান করা বিষয়ে দলীয় রীতি অনুযায়ী উপাচার্যকে সুপারিশ করা, দলীয় একজন সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে আনীত অভিযােগের বিষয়ে উক্ত সদস্যের জবাব বিবেচনা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ােগসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটির সভা আহবানের জন্য কনভেনারকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও তিনি এসব বিষয়ে সভা করবেন বলে ১ এপ্রিল কো-কনভেনারগণকে জানিয়ে দেন।

এ প্রেক্ষাপটে তারা হেফাজতের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলােচ্যসূচির এক নম্বরে রেখে ওপরের বিষয়গুলাে নিয়ে অনতিবিলম্বে স্টিয়ারিং কমিটির সভা আহবানের জন্য তাকে এ দিনই পত্র দেন। তারা বলেনম দুঃখের বিষয়, গত ৫ এপ্রিল তিনি পত্র মারফত জানান যে, দেশব্যাপী করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এ মূহুর্তে স্টিয়ারিং কমিটির সভা আহবান করা সমীচীন মনে করি না। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সাক্ষাৎ বিষয়ে দলের সাথে উপাচার্যের প্রতারণামূলক আচরণ নিয়ে আমরা কনভেনারকে ভাচুয়্যাল সভা অনুষ্ঠানের জন্য গত ৫ এপ্রিল দুপুরে টেলিফোনের মাধ্যমে অনুরােধ করি। কিন্তু এক্ষেত্রেও তিনি আর কোনাে সভা করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এছাড়াও তিনি ‘তােমাদের ক্ষমতা থাকলে যা করার তাই কর’ বলে হুমকি দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিবৃতির বিষয়টি শুনেছি। পুরো বিবৃতি আমি এখনো পড়িনি। আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে আমি চিঠির মাধ্যমে তাদের বিবৃতির উত্তর দিবো।’


সর্বশেষ সংবাদ