চবিতে আবাসন সুবিধা বঞ্চিত ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২১ শতাংশ পাচ্ছে আবাসন সুবিধা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাকি ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছেন আবাসিক হলে থাকার সুবিধা থেকে। শিক্ষার্থীদের দাবি, আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় হয়েও চবির অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই হলে আবাসিক সুবিধা না থাকায় তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে শুধু বঞ্চিতই হচ্ছেন না, অনেক ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এছাড়াও, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন শাটল ট্রেনে ‘গাদাগাদি’ করে। বাসে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও মেয়ে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ার ঘটনা শোনা যায় প্রায়ই।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চবির মোট ২২ হাজার ৯০২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১২টি (বর্তমানে ১৩টি) আবাসিক হলে আসন রয়েছে চার হাজার ৯০০টি, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র রয়েছে দুই হাজার ৬৯৬ জন ও ছাত্রী রয়েছে দুই হাজার ২০৪ জন। অপরদিকে, ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শতভাগ আবাসন সুবিধা রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ শতাংশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ শতাংশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৪ শতাংশ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ শতাংশ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৯ শতাংশ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৩ শতাংশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ছয় শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, চবির আবাসিক হলগুলোতে সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুন মাসে আসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দায়িত্ব গ্রহণের পর দু’দফায় আসন বরাদ্দের সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়।

হল সূত্রে জানা যায়, চবির ছাত্র হলগুলোর মধ্যে আলাওল হলে আসন রয়েছে ২৬০টি, এ এফ রহমান হলে ২৫৭টি, শাহজালাল হলে ৪৭৫টি, শাহ আমানত হলে ৬৩২টি, সোহ্‌রাওয়ার্দী হলে ৩৭৫টি, শহীদ আব্দুর রব হলে ৫০৯টি ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১৭৬টি আসন রয়েছে। ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে শামসুন নাহার হলে ৪৮১টি, প্রীতিলতা হলে ৫৩১টি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ৫০৮টি, জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে ৭৫০টি (আংশিক নির্মাণাধীন), মাস্টারদা সূর্যসেন হলে (আংশিক) ৩৯টি আসন রয়েছে। এছাড়া ছাত্রদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও অতীশ দীপঙ্কর হল এবং ছাত্রীদের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল নির্মাণাধীন রয়েছে।

আবাসন সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আমিন উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও মননশীলতা চর্চায়, সমৃদ্ধ জ্ঞানার্জনে এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের পাশাপাশি যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিসীম তাৎপর্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আবাসন ব্যবস্থা, তথা হল সুবিধা। কেননা, হল ভিত্তিক শিল্প-সাহিত্য, বিতর্ক, খেলাধুলা ও সাংগঠনিক চর্চার অনেক বেশি সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে হলের গ্রন্থাগার থেকে একাডেমিক পড়াশোনা, পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়ার সুবিধা থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে বৈচিত্র্যময়, উপভোগ্য ও স্মৃতিময় করতেও হলের অবদান যে কতখানি তা কেবল হলে থাকা শিক্ষার্থীই বুঝতে পারেন। এছাড়া ক্যাম্পাসে যাতায়াতে বিড়ম্বনাসহ মেস-বাসা ভাড়া নিয়েও ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতসব সমস্যা সমাধানকল্পে এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু-স্বাভাবিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।’

ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রফিকুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘স্বপ্ন পূরণের জন্য শিক্ষার্থীরা দূরদূরান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। আবাসিক সুবিধা না থাকায় এ স্বপ্ন পূরণে বাধাপ্রাপ্ত হন অনেকেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এত বিশাল আয়তনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অবাসিক সুবিধা পায় না। যারা বিভিন্ন মেস বা কটেজে থাকে, তাদের বিভিন্ন সময় আবাসন ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও পড়ালেখার জন্য অনেক সময় অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যায় না মেসগুলোতে। সময়মত ক্লাসে উপস্থিত থাকাটাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসের আশেপাশে মেসগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ খুবই দুর্লভ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরে হওয়ায় শহর থেকে যাতায়াতে সময়ের একটা বড় অংশ অপচয় হয় প্রতিদিন। সবমিলিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সুবিধা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন দিক থেকে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট এ.কে.এম. রেজাউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হল সংখ্যা বাড়ানো জরুরি, বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের। শহর থেকে দূরে হওয়ায় যাতায়াতেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে কিছু হল নির্মাণাধীন রয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের একটি অংশ এখনো নির্মাণাধীন, কিছু ছাত্রীকে সেখানে আবাসন সুবিধা দেয়া যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এস.এম. মনিরুল হাসান বলেন, ‘আবাসিক হল বৃদ্ধির বিষয়টা আমরা পাঁচ বছরের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) মধ্যে রেখেছি। ডিপিপির কাজ প্রায় শেষের দিকে। আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার থেকে অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ৫০ বছরের মাস্টার প্ল্যানও প্রায় শেষ। এরমধ্যে পাঁচ বছরের ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে, অনুমোদন পেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। নির্দিষ্ট এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ