মৃত্যুজয়ী হাদীউজ্জামান এখন সফল উদ্যোক্তা

গাজী হাদীউজ্জামান
গাজী হাদীউজ্জামান  © টিডিসি ফটো

কেউবা তাকে `মধু ভাই' বলে ডাকে, কেউবা ডাকে ‘ঘি ভাই’ বলে। অবশ্য বন্ধুরা তাকে আদর করে ‘রক্তচোষা’ বলেও ডাকে। তাঁর এই নামগুলোর প্রত্যেকটির পিছনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট। রয়েছে দারুণ কিছু গল্প। নামগুলো যেন তাঁর প্রতি আদর-স্নেহমাখা, ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা আর সফলতার স্বীকৃতি। সকলের কাছে তিনি এক মৃত্যুঞ্জয়ী নামও বটে। তিনি হলেন গাজী হাদীউজ্জামান।

গাজী হাদীউজ্জামান পড়ালেখা করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করার স্বপ্ন দেখতেন হাদীউজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যেন তাঁর সে স্বপ্ন ডানা মেলে ধরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যুক্ত হয়ে পড়েন স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের সাথে। মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত সংগ্রহ করে দেয়া যেন তাঁর নেশায় পরিণত হয়ে পরে। বন্ধুদের সাথে তাঁর সম্পর্ক হয়ে উঠে রক্ত দেয়া-নেয়ার। তাই তো বন্ধুরা তাকে ভালোবেসে ‘রক্তচোষা’ বলেও ডাকে।

সদা হাসিখুশি, মিষ্টভাষী হাদীউজ্জামানের জীবনে ঘন-কালো এক মেঘের আবির্ভাব ঘটে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। সে সময় প্রাণঘাতী (জিবিএস) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। পুরো শরীর আস্তে আস্তে প্যারালাইজড হতে শুরু করে। ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করলে ডাক্তাররা জানান, ভ্যাকসিন দিতে ১০ লাখেরও বেশি টাকা লাগবে। মধ্যেবিত্ত পরিবারে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। পরিবারের সহায়সম্বল, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে বিভিন্ন মানুষের আর্থিক সহায়তায় এক মাসের নিবিড় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।

শুরু হয় নতুন প্রত্যয়ে জীবন সংগ্রাম। ছাত্রাবস্থায় স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে বরিশালে কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। সেখান থেকে পড়ালেখার পাশাপাশি উপার্জন করতে শুরু করেন তিনি। জড়িত হয়ে পড়েন ভিন্নধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা ‘শেখাই’ এর পরিচালক প্যানেলেও।

মহামারি করোনা ভাইরাসে জনজীবন বিধ্বস্ত হয়ে পড়লে সে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভেঙ্গে পড়েননি হাদীউজ্জামান। লকডাউনে বাড়িতে বসে দেখলেন মানুষ ভেজাল পণ্য ছাড়া ভালো কোন পণ্য খুঁজে পায় না। তাই মানুষের দোরগোড়ায় খাঁটিপণ্য পৌঁচ্ছে দিতে নিজ এলাকা সাতক্ষীরার বিখ্যাত মধু ও ঘি নিয়ে “বিখ্যাত পণ্য সম্ভার” নামে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। অল্পদিনেই গ্রাহকের কাছে খাঁটি পণ্যের বিশ্বস্থ সহযোগী হয়ে উঠেন তিনি। তাইতো গ্রাহকেরা তাকে ভালোবেসে ‘মধুভাই’, ‘ঘি-ভাই’ বলে ডাকেন।

তাঁর সাথে বর্তমানে কাজ করছে আরো পাঁচ শিক্ষার্থী। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের হালও ধরতে পারছে তাঁরা।

শুরুতে মধু, ঘি দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে হাদীউজ্জামান তাঁর ‘বিখ্যাত পণ্য সম্ভার’কে আরো বিস্তৃত করেছেন। প্রাকৃতিক চাকের মধু, সুন্দরবনের মধু, চাষের মধু আর সাতক্ষীরার জনপ্রিয় ঘি-এর সাথে যুক্ত করেছেন খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল, যশোরের গুড়, যশোরের টাটকা ফুল, খুলনার বিখ্যাত চিংড়ি শুটকি, চট্টগ্রামের শুটকি, যশোরের গরুর ঘানি ভাঙ্গানো সরিসার তেল ইত্যাদি। নিজ হাতেই এগুলো সংগ্রহ করেন তিনি।

জীবনযুদ্ধে সফল উদ্যোক্তা হাদীউজ্জামান জানান, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করবো। চাকুরির পিছনে না ছুটে অন্যকে চাকরি দিব। সেক্ষেত্রে আমি অনেকটা সফলও হয়েছি। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে একটি ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান খুলবো। যেখানে অনেকেই কাজ করতে পারেন।

এ সময় তিনি ‘বরিশাল বিভাগীয় উদ্যোক্তা হাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশ ও দশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সকলের দোয়া ও আর্শীবাদ কামনা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ